পরিশুদ্ধ আতœাই নির্মল শান্তির প্রথম ধাপ
য় কাউসার মাহমুদ
মানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হয় সাধারণত: অনেকটা সময় ধরে। ‘অনেকটা সময়ে’র বিশ্লেষণ কিন্তুু আপেক্ষিক। চিন্তাশীল মন মাত্রই এই ‘অনেকটা সময়ের’ যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজবে। সে যাই হোক গে। সবকিছু ছাঁপিয়ে ভাবনারা কিন্তুু অবশ্যই একটা জিনিসকে অস্বীকার করতে পারবে না। আর সেটা হলো! ‘আমাদের সঠিক বোধ হওয়ার পর থেকে যতটুকু সময়ই তথা যতদিন,যত মাস, যত বছর, অথবা যত যুগই আমরা সমাজে বাস করি, পৃথিবীতে বেঁচে থাকি’। একটা সময়ের আবর্তেই বেঁচে থাকি। এক্ষেত্রে সময়কে বেঁধে রাখার কোন পদ্ধতিই কিন্তুু পৃথিবীতে আমাদের কাছে নেই। যেহতু সময় এটা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। তাই সবকিছুর মতো এর নিয়ন্ত্রকও তিনি। এটা ভিন্ন বিষয়। তবে মূল কথা যেটা বলতে চাচ্ছি তা হলো: এই আমাদের বেচে থাকা। ধরুন পাঁচ যুগ, পাঁচ বছর,পাঁচ মাস, এবং নিদেনপক্ষে পাঁচ দিন অথবা তার চেয়েও কিছু কম সময়। এ সময়টুকুও কিন্তুু অনেকটা সময়। সাধারণ ভাবে যদি আমরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হিসেব কষি, তাহলে আমরা দেখতে পাই বিবেক জন্মানোর পরবর্তি সেকেন্ড থেকেই কিন্তুু আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে হিসেব দিতে হবে। আর ঠান্ডা মাথায় শীতল মস্তিষ্কেও যদি আমরা স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টা ভাবি। যে, স্বল্প কিছু সময়ও যদি আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকি,তাহলে এ সামান্য সময়টুকুও আমাদের সমাজের সাথে বাঁচতে হয়। আমাদের পরিবার, আতœীয়, এমনকি পৃথিবীর মানুষদের নিয়েই বাঁচতে হয়। সুতরাং আমাদের বেঁচে থাকাটা কিন্তুু অনেক অর্থবহ আর অনেকটা সময় ধরেই।
অতএব যতটুকু সময়, যে ক’টা দিনই আমরা পৃথিবীর আলোতে ঘুুরবো। এর বাতাস গ্রহণ করবো। সমাজবদ্ধ হয়েই কিন্তুু আমরা এসব করবো। তথা, আমাদের বেঁচে থাকাটা সমাজকে নিয়েই। তাই আমাদের করণীয়, বর্জনীয় বিষয়ও অনেক। সমাজ, পৃথিবীর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর প্রতিটা প্রাণী থেকে নিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব যে মানুষ তথা আমরা। এই আমাদের একে অপরের উপকার ও ভালোমন্দের দায়িত্বভার কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের। আর এ সকল দায়ভার,সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ বিবেচ্য হয় প্রত্যেক মানুষের নিজ চিন্তার বলয় থেকে। আর আমরা জানি সব চিন্তার পেছনেই কাজ করে মানুষের আত্মিক চিন্তা তথা মনোভাবনা। মানুষের অন্তর। অতএব পৃথিবীর সকল বিষয় যা কিছু মানুষের অন্তর নির্ণয় করে। তার ভালো খারাপের ফলাফল নির্ণায়িত হয় মানুষের পবিত্র-অপবিত্র, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, ভালো -মন্দ ‘অন্তর’ থেকে। অর্থাৎ ‘পৃথিবীতে মানুষের পরিশুদ্ধ আতœাই অপরের জন্য মোটকথা পুরো পৃথিবীর জন্য শান্তির প্রথম ধাপ’।
খুব সহজ করে আমরা চোঁখ ঘুরালেই দেখতে পাই। এই যে আমাদের সমাজ, সংসার, দেশে এতো সঙ্কট, মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি, পুরো পৃথিবীজুড়ে দুরবস্থা। অশান্তি আর অনিশ্চয়তার দোলাচলে যাপিত হয় প্রতিটা সত্তার প্রাণ। এসবের পেছনে অন্য কারণ থাকলেও অন্যতম কারণ কিন্তুু একটাই! তা হলো : ‘আতœার অপরিশুদ্ধতা’। ব্যাক্তি, সমাজ, সংসার, দেশ, পৃথিবীর যে যেখানেই যে অবস্থানে আছ। সে সেখানে সে অবস্থায় তার আতœা তথা ‘মনের’ বিশুদ্ধতার পাঠ নেয়নি। তাই প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যার কাছে একবিন্দু পরিমাণ ও ক্ষমতা আছে। যার কাছ থেকে অন্য মানুষ, অথবা দেশ, জাতি, সমাজ, সংসার ও পৃথিবীর জন্য কিছু বের হয়। তার মন থেকে কিন্তু অবশ্যই ভালো, শুদ্ধ ও কল্যাণকর কিছু বের হয় না। কারণ : তার ভেতরটা অর্থাৎ আতœাটাই পরিশুদ্ধ নয়।
ফলে, আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবন সবটাই হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। আমাদের পরস্পরের বিশ্বাসের ভাঁড়া শূন্য থেকে থেকে একসময় উল্টিয়ে যায়। নিজের খুব কাছের মানুষটিকেও বিশ্বাস ও ভালোবাসতে গেলে দিধায় ভূগতে থাকি। কি হলো! কি হলো! মনে করে, একটা অশরীরী প্রেতাত্মার মৌন সন্দেহে আমাদের জীবন থেকে ‘সুখ’ শব্দটা উচ্ছন্নে চলে যায়। আমরা হয়ে ওঠি প্রেমহীন, ভালোবাসাহীন, আবেগশুন্য কিছু জীবন্ত জড় পদার্থ। পরশ্রীকাতরতায় ডুবে থাকতে ভালোবাসি অনেক। অশুদ্ধ আতœার সবচেয়ে বড় সফলতা হলো নূন্যতম সঠিক ও শুদ্ধ কিছু না করতে পারলেও অন্যের ক্ষতি, হিংসে, দোষ চর্চায় তাকে ধরে রাখা সে সত্তাকে বড় পটু করে তোলে।
এভাবেই চলতে থাকে। আতœার পরিশুদ্ধতার অনুপস্থিতি তে জন্মায় ঘেন্না, ক্ষোভ আর পরস্পর বিরোধীতার মানসিকতা। আস্তে আস্তে আমাদের মানসিক অধঃপতনের সূচনা হয়। যে মানসিক অধঃপতন একসময় অন্যকে ধ্ববংসের পায়তারায় লালায়িত হয়ে উঠে। ফলাফল: ক্রমেই বাড়তে থাকে অশান্তি, দুঃখ, কষ্ট। মানুষ ক্ষতিগ্রস্হ হয় একে অপরের দ্বারা। সমাজ, দেশ তার কাছ থেকে পায় সুখ-শান্তির ভাবনার পরিবর্তে কিছু ক্লেদাক্ত ব্যবহার। অশান্তির আয়োজন। দিনে দিনে এ অপরিশুদ্ধ আতœার মানুষ’টি হয়ে ওঠে অসম্ভব রকমের হিং¯্র। তার এরকম হয়ে উঠাও স্বাভাবিক। কারন: এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি পরিচালিত হয় তার কুৎসিত মনন দ্বারা। অপরিশুদ্ধ মনের নেঁশার ঘোরে পড়ে গিয়ে তার হাত, পা, শরীর, মুখ, তার পুরো ব্যক্তি সত্তা জন্ম দিতে থাকে একেকটা পাপ।
তাহলে এসবের প্রতীকার কি?
অর্থাৎ অপরিশুদ্ধ আতœাকে শুদ্ধ ও পবিত্র করার উপায় কি?
স্বভাবতই: এ প্রশ্নটা অবশ্যই আসবে। আশা উচিৎ। যদি কারো মনে এরকম প্রশ্ন উদয় হওয়ার শক্তিও না জন্মায়! তাহলে তার সুস্থ ও চিন্তক অনুভূতি কতটুকু আছে এটা ভাববার বিষয়। আতœার পরিশোধনের উপায় এটা একদিক থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে সামান্য কঠিন কিছু। তবে উৎসুক, আগ্রহী ও ইহকাল পরকালে সফলতার আশাতীত ব্যক্তির জন্য এটা নিতান্তই সামান্য। কষ্টের কিছুই নেই এখানে। ব্যক্তি তথা ইহকালীন জীবনেও আমরা যদ্দিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো। তদ্দিনও আমরা আতœার শুদ্ধত্বে নির্মল সুখ-প্রশান্তির মাঝে বেঁচে থাকতে পারবো। মানুষের বেঁচে থাকার এতোশত আয়োজন এসবের শেষ ভাবনাতো একটাই! সে পরম আরাধ্য ‘সুখ’।
অতএব! একজন মানুষ যখন তার আত্মার পরিশোধনে সচেষ্ট হবে। তখন নিজ থেকেই অপরিশুদ্ধতা প্রতিকারের পথ খুঁজবে। তবে এ ক্ষেত্রে তথা আত্মা পরিশুদ্ধির প্রথম পথই হলো: ¯্রষ্টার আদেশ-নিষেধে নিজেকে পরিচালিত করা। তার দেয়া বিধি- নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমেই কাঙ্খিত পথে এগুবে ব্যক্তি ধীরে ধীরে।তারপর ব্যক্তি, ¯্রষ্টার সৃষ্টির মাঝে তার কুদরতের অপার রহস্য খুঁজবে। এতে করে ভেতরাত্মা জেঁগে ওঠবে সজীব হয়ে। ভেতরে জন্মাবে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রতি মায়া, আদর, ভালোবাসা। তার সামনে আস্তে আস্তে প্রস্ফুটিত হতে থাকবে মানুষসহ সকল সৃষ্টির জন্য কোনটা কল্যাণকর, আর কোনটা অকল্যাণকর। নিজেকে সে তখন কল্যাণের পথে পরিচালনার জন্য নিজ থেকেই উদ্বিগ্ন হবে। সকল অকল্যাণ, মন্দ, পাপের প্রতি তার অনীহা আর বিরাগ জন্মাবে আতœা থেকেই। একপর্যায়ে এসে তার আত্মা সজাগ হয়ে খুঁজতে থাকবে, আমার চারিপাশ আমার সমাজ, পৃথিবীর মানুষ কোন বিষয়টাকে সুন্দর, শুদ্ধ আর সত্য বলে মানে। বিপরীতে কোন বিষয়টাকে তারা অসুন্দর, অশুদ্ধ আর মিথ্যা বলে জানে। তখন ব্যক্তি তার জাগরুক আতœার দৃঢ় প্রত্যয়ে এ-সব কিছু! যা গ্রহন করার তা গ্রহন করবে, আর যা বর্জন করার তা বর্জন করে নিজের মাঝে এ প্রত্যয়ের স্থায়ীত্ব কামনা করবে। এভাবেই আত্মা পরিশুদ্ধতা পেয়ে নির্মল হয়ে উঠবে। আজকাল নামমাত্র কিছু আধুনিক বা বিভিন্ন ধাঁচের স্বল্প লোকের স্বতন্ত্র থিওরি গ্রুপ বা সংগঠন ভিওিক হয়ে সমাজে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার একটা শক্ত প্রবণতা চলছে। সেটি হলো: তাদের ভাস্ব অনুযায়ী সমুদ্র দর্শন, প্রকৃতির সবুজে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সুখ-উপভোগ করা সহ এ জাতীয় আরো কিছু কর্মপদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে নাকি আতœার পরিচর্যা হয়ে আত্মশুদ্ধি হয়। এটা একদম ভিওিহীন,অনর্থবহ কথা। সমুদ্র, প্রকৃতি বা নির্দিষ্ট কোন ব্যায়াম মানুষের ‘আত্মশোধন’ করতে পারেনা। তবে হ্যাঁ ¯্রষ্টার এ বিপুল সৌন্দর্য সৃষ্টি উপভোগের মাধ্যমে মন প্রশান্তি অনুভব করে। চিত্ত বিনোদন হয়। কাজে উদ্যমতা আসে। স্বতন্ত্র ভাবে এগুলো মানুষের আত্মপরিশোধনে কোন ক্ষমতাই রাখেনা। বরং এসব কিছু এবং জগতের ¯্রষ্টার প্রতি একাগ্রচিত্ত হয়ে তার এসকল সৃষ্টি মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করার মাধ্যমেই আত্মার পরিশোধন প্রক্রিয়া সম্ভব। মোটকথা, আত্মপরিশোধনে সর্বপ্রথম সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে নিবেদিত করতে হবে।
অতএব! আমাদের এসব বিশ্লেষণ। পরিপূর্ণ অথবা অপরিপূর্ণ কিছু যৌক্তিক অথবা স্বাভাবিক বিষয়ের অর্থ এটাই যে: যার ভেতর তথা মনের পরিশুদ্ধতা আছে সে ব্যক্তি নিজে ও তার জীবনের সাথে জড়ানো সবকিছু এবং পৃথিবীর প্রত্যেকটা সৃষ্টি তার কাছ থেকে নিরাপদ। এবং সুখ-শান্তির আশা করতেও পারে। সুতরাং সারনির্যাস যদি একবাক্যে আনতে যাই তাহলে আমরা এভাবে বলবে: পরিশুদ্ধ আতœাই নির্মল শান্তির প্রথম ধাপ।