বিদ্যুতে কেন এত লোকসান
(প্রথম পৃষ্ঠার পর) (এসপিএল) ও আরইবির মধ্যে উদ্ভূত বিরোধ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (কমিশন) ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রদত্ত এক আদেশে নিষ্পত্তি করে। সে আদেশ পুনর্বিবেচনার এক আবেদন কমিশন ওই সালের ২২ নভেম্বর প্রদত্ত এক আদেশে খারিজ করে। আরইবি ছিল কমিশনের ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনের আবেদনকারী। সে আদেশ অনুযায়ী ‘বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি’ মতে অনাদায়ী বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে আরইবি ৬৩ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৫০৯ টাকা সুদসহ এসপিএলকে পরিশোধ করবে। তাতে বিদ্যুতে আর্থিক ঘাটতি বাড়বে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের ট্যারিফ (মূল্যহার) বৃদ্ধি হবে। তাই ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষার্থে সম্পূরক চুক্তিটি বাতিল হওয়া জরুরি।
দুই. ১৩ জুন ২০১৩ এসপিএল কমিশনের নিকট প্রেরিত এক আবেদনে উল্লেখ করে যে, তারা ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০০ নরসিংদীর মাধবদি, কুমিল্লার চান্দিনা এবং সাভারের আশুলিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য আরইবির সঙ্গে ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি’ স্বাক্ষর করে। সে চুক্তির শর্তাধীনে প্রত্যেকটি স্থানে ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হবে। উক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উভয় পক্ষের মধ্যে বেচা-কেনা হবে। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে যথাযথ উদ্যোক্তা নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণক্রমে এই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হয়। বিদ্যুৎ ক্রয় মূল্যহার নির্ধারণের জন্য কারিগরি মানদ-ের ভিত্তিতে প্রণীত গ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতিও এই চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। পদ্ধতিটি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কারিগরি মানদ-ে গৃহীত হয়। সে পদ্ধতি মতে বিদ্যুতের লেভেলাইজড মূল্যহার (ট্যারিফ) নির্ণয় হয়। সেই মূল্যহারে বিদ্যুৎ বিল হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তথা গ্যাসের মূল্যহারের তারতম্য হলে বিদ্যুতের মূল্যহারে তা সমন্বয় হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় চুক্তিতে নির্ধারিত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ও প্লান্ট ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে উল্লেখিত প্রতিটি ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি প্লান্টেরই উৎপাদিত বিদ্যুতের ক্রয় মূল্যহার ছিল উক্ত পদ্ধতি মতে ২ টাকা ২০ পয়সা।
তিন. পরবর্তীতে ওই ৩টি প্লান্টের প্রত্যেকটির উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। বর্ধিত উৎপাদনক্ষমতায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ বেচা-কেনার জন্য আরইবি ও এসপিএল-এর মধ্যে ‘বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি’ যথাক্রমে ২০০৫ সালে ২৮ জুন এবং ২০০৬ সালে ২০ মার্চ স্বাক্ষরিত হয়। এ সম্পূরক চুক্তিতে পূর্বের বিদ্যুৎ ক্রয় মূল্যহার নির্ধারণ পদ্ধতির স্থলে নতুন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে পদ্ধতি মতে পাইকারী বিদ্যুৎ পিডিবির নিকট থেকে যে মূল্যহারে [ইঁষশ ঝঁঢ়ঢ়ষু ঞধৎরভভ (বিএসটি)] আরইবি ক্রয় করবে, এসপিএল-এর ওই বিদ্যুতের মূল্যহার হবে ‘সে মূল্যহার (বিএসটি)Ñ ৩ পয়সা’। মূল্যহার নির্ধারণের এ পদ্ধতি কারিগরি বা আইনি ভিত্তিহীন। এমন পদ্ধতি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। তরল জ্বালানির মূল্য এবং সে জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে বিএসটির অব্যাহত বৃদ্ধি সম্পূরক চুক্তির শর্তাদিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আবার এ সম্পূরক চুক্তি উন্মূক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সম্পাদন হয়নি। সুইচ চ্যালেঞ্জের ভিত্তিতেও নয়। আরইবি ও এসপিএল আরবিটারিলি এমন ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। অদ্যাবধি সে চুক্তি বলবৎ আছে।
চার. চুক্তিকালীন সময়ে বিদ্যুতের পাইকেরি মূল্যহার (বিএসটি) ছিল ২ টাকা ৫ পয়সা। এ মূল্যহার ফেব্রুয়ারি ২০১১ হতে সেপ্টেম্বর ২০১২ অবধি ৬ দফা বৃদ্ধিতে হয় ৪ টাকা ০৩ পয়সা। বর্তমানে ৪ টাকা ২৩ পয়সা। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না হলেও তরল জ্বালানির মূল্যহার একদিকে যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের অনুপাতও তেমন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই বিএসটিও দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকে। ফলে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিকট আরইবি সম্পূরক চুক্তিটি রিভিউ করার প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব আমলে না নিয়ে মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল প্রদত্ত পত্রে উক্ত প্রস্তাব নাকচ করে। ফলে সম্পূরক চুক্তির আওতায় বিএসটির ভিত্তিতে দাখিলকৃত এসপিএল-এর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে আরইবি অস্বীকৃতি জানায়। অতঃপর ২০১৩ সালের ১২ জুন এসপিএল পরিবর্তিত বিএসটির ভিত্তিতে বিল প্রাপ্তির দাবি করে এবং সে মর্মে কমিশনের নিকট বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন পেশ করে।
পাঁচ. বিরোধ নিষ্পত্তির ওই আবেদনে এসপিএল তার ৩টি সম্প্রসারিত বিদ্যুৎ প্লান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ আরইবির নিকট বিক্রি বাবদ অনাদায়ী বিল দাবি করে। উক্ত আবেদনে এসপিএল ‘বিএসটি ৩ পয়সা’ মূল্যহারে বিল চেয়েছে। সম্প্রসারিত প্লান্টসমূহের অনাদায়ী বিদ্যুৎ বিল বাবদ আরইবির নিকট এসপিএল-এর দাবি ৬৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। অনাদায়ী বিলের সময়কাল ডিসেম্বর ২০১১ থেকে এপ্রিল ২০১৩ (১৯ মাস)। মে ২০১৩ থেকে ওই সব প্লান্টের বিদ্যুৎ ক্রয় আজ অবধি সম্পূরক চুক্তি মতে অব্যাহত আছে। ওই আবেদনে এ সময়ের বকেয়া বিল দাবি করা হয়নি। ফলে চুক্তি পরিবর্তন বা বাতিল না হওয়ায় বকেয়া বিল মাসে মাসে পুঞ্জিভূত হয়ে বিশাল অংকে পরিণত হচ্ছে।
ছয়. আরইবির বক্তব্যে জানা যায় : (ক) ২০১১ সাল থেকে ২০১২ সাল অবধি বিদ্যুতের পাইকেরি মূল্যহার (বিএসটি) ৬ বার বৃদ্ধি এবং বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হওয়ায় এ চুক্তিটি আরইবির প্রতিকূলে যায়। ফলে সম্পূরক চুক্তিটি রিভিউ-এর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়।
(গ) মন্ত্রণালয় থেকে নিম্নরূপ নির্দেশনা পাওয়া যায় : ‘বিএসটি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সামিট পাওয়ার লি. এর চান্দিনা, মাধবদি ও আশুলিয়া সম্প্রসারিত পাওয়ার প্লান্টসমূহের বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই।’
এসপিএল মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা মেনে নেয়নি। সম্পূরক চুক্তি মতে বিল পরিশোধের জন্য আরইবিকে অনুরোধ জানায়।
(ঘ) এমতাবস্থায় আরইবি ও এসপিএল উভয়ের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় এমন সমাধানের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে চুক্তিটি পর্যালোচনাসহ মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এবারেও পূর্বের অনুরূপ নির্দেশনায় পাওয়া যায়। তা এসপিএলকে অবহিত করা হলে এসপিএল বিল ও সুদসহ বকেয়া ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য লিগ্যাল নোটিশ দেয়।
(ঙ) অতঃপর ৯ মে, ২০১৩ বিদ্যুৎ বিভাগে বিদ্যুৎ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচ্য বিয়য়টি বিবেচনান্তে নিম্নরূপ সিদ্ধন্ত গৃহীত হয় : ‘গ্যসভিত্তিক বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত ইন্ডিকেটিভ বেঞ্চমার্ক বাল্ক ট্যারিফ (২.৯৯০১ টাকা/কি.ও.আ) কে ঊর্ধ্বসীমা বিবেচনা করে আরইবি এসপিএল-এর সঙ্গে আলোচনা পূর্বক ট্যারিফ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে।’
(চ) বর্ণিত সিদ্ধান্ত মতে এসপিএলকে ট্যারিফ প্রস্তার দাখিল করতে বলা হলে এসপিএল সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে এবং নিম্নরূপ অভিমত ব্যক্ত করে : ‘বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত গ্যাসভিত্তিক বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেঞ্চমার্ক ট্যারিফ (২.৯৯০১ টাকা/কি.ও.আ) কে ঊর্ধ্বসীমা ধরে সম্পূরক চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন আরইবি ও এসপিএল-এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি শর্তের সহিত সংগতিপূর্ণ নয়।’
(ছ) গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ আরইবির সদস্য(প্রকৌশল) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরইবি এসপিএলকে নিম্নরূপ প্রস্তাব দেয় : (অ)আশুলিয়া, মাধবদী ও চান্দিনা সম্প্রসারিত পাওয়ার প্লান্টসমূহের জন্য প্রস্তাবিত ট্যারিফ গ্যাসভিত্তিক বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিইআরসি কর্তৃক জারিকৃত ইন্ডিকেটিভ বেঞ্চমার্ক ট্যারিফ (২.৯৯০১ টাকা/কি.ও.আ) অপেক্ষা কম হতে হবে। গ্যাসের মূল্যহার বিইআরসির আদেশ অনুযায়ী হবে।
(আ) প্রস্তাবিত ট্যারিফ ০৯.০৫.২০১২ তারিখ হতে কার্যকর হতে পারে। (ই) ০৯.০২.২০১২ তারিখের পূর্বের বিলসমূহের বিপরীতে বকেয়া দাবি করা হবে না। (ঈ) ট্যারিফের আলোচ্য অংশ ব্যতীত চুক্তির অন্যান্য অংশ অপরিবর্তিত থাকবে।
এসপিএল এসব প্রস্তাবে একমত হয়নি। বরং আরইবিকে অবহিত করে যে, দাখিলকৃত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল চুক্তি মতে পরিশোধের পর নতুন ট্যারিফ প্রস্তাব ও চুক্তির প্রয়োজনীয় সংশোধনী নিয়ে আরইবির সঙ্গে এসপিএল-এর আলোচনা হতে পারে।
সাত. এসপিএল ও আরইবির মধ্যে উদ্ভূত বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে প্রাথমিক শুনানিন্তে কমিশন উভয় পক্ষকে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৯ আগস্ট ২০১৩ নির্দেশ দেয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ আরইবি কমিশনকে অবহিত করে যে, তারা পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কমিশন বিরোধটি নিষ্পত্তির জন্য বিইআরসি ট্রাইব্যুনালে পাঠায়।
আট. পক্ষ দুটি কর্তৃক স্বাক্ষরিত সম্পূরক চুক্তিতে যেহেতু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাতিল করলে এ চুক্তিটি বাতিল হতে পারে, এমন কোনো বিধান ট্রাইব্যুনাল খুঁজে পায়নি; যেহেতু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ সংযোজনের ফলে বিএসটি বৃদ্ধি ‘ফোর্স মেজিউর’ বলে ট্রাইব্যুনালের নিকট প্রতীয়মান হয়নি; সেহেতু ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের শুনানিন্তে এসপিএল-এর আবেদন গ্রহণ করে এবং সম্পূরক চুক্তি মতে এসপিএল-এর দাবিকৃত বিল সুদসহ বকেয়া পরিশোধের জন্য আরইবিকে আদেশ দেয়। কশিমন কর্তৃক সে আদেশ অনুমোদিত হয়। এ আদেশ রিভিউ-এর আবেদনও কমিশন খারিজ করে। চুক্তি বাতিল না হওয়ায় এ চুক্তি মতে বিদ্যুৎ ক্রয় অব্যাহত আছে। ফলে প্রতিবছর ভোক্তাদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি যাচ্ছে। তাই ভোক্তাদেরই এ চুক্তি বাতিলের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
নয়. আলোচ্য বিরোধ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় : (ক) এসপিএল-এর বিদ্যুৎ প্লান্টসমূহের বিদ্যুৎ ক্রয়কল্পে আরইবি ও এসপিএল-এর মধ্যে ২০০০ সালে সম্পাদিত ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি’ সরকারের এসআইপিপি পলিসি সম্মত এবং সে পলিসিতে বর্ণিত সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। (খ) পরবর্তীতে আরইবি ও এসপিএল-এর মধ্যে সম্পাদিত সম্প্রসারিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ‘বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি’ সরকারি খাতে ব্যক্তি খাত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আইন বা বিধি-বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যৌক্তিক নয়। (গ) বিএসটি বৃদ্ধিতে সম্প্রসারিত বিদ্যুৎ প্লান্টসমূহের বিদ্যুৎ ক্রয় মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব ২০১২ সালে ৩০ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক নাকচ হওয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। তবে সে সিদ্ধান্ত কার্যকর না করে সরে আসা এবং বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুৎ ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত ইন্ডিকেটিভ বেঞ্চমার্ক মূল্যহারের ভিত্তিতে ওই মূল্যহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেওয়া অযৌক্তিক এবং সাংঘর্ষিক। (ঘ) বর্ণিত সম্পূরক চুক্তির সঙ্গে ওই সিদ্ধান্ত অসংগতিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে এসপিএল। সুতরাং সম্পূরক চুক্তিটি বহাল রেখে বিএসটি বৃদ্ধিতে সম্প্রসারিত প্ল্যান্টের বিদ্যুতের ক্রয় মূল্যহার বৃদ্ধি না করার কোনো সূযোগ নেই। (ঙ) সম্পূরক চুক্তিটি বিদ্যুৎ খাতে অসাধু ব্যবসা জন্ম দিয়েছে এবং ভোক্তাস্বার্থ বিপন্ন করেছে। (চ) বিইআরসি আইনের ২২(ঞ) ও (ট) ধারা মতে ভোক্তা বিরোধ, অসাধু ব্যবসা বা সীমাবদ্ধ ব্যবসা সম্পর্কিত বিরোধের প্রতিকার করা এবং ৩৪(২)(ঘ) ধারা মতে মূল্যহার নির্ধারণ ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভোক্তাস্বার্থ বিবেচনা করা কমিশনের এখতিয়ার। (ছ) আরইবি ও এসপিএল-এর মধ্যে বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিরোধ ভোক্তাস্বার্থ ও বিরোধ সংশ্লিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভোক্তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। কিংবা কমিশন বা ট্রাইব্যুনালের আদেশে ভোক্তাস্বার্থ বা বিরোধ বিবেচিত হয়নি। (জ) ফলে বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধিতে বর্ণিত সম্পূরক চুক্তি নিয়ে ভোক্তার সঙ্গে আরইবি ও এসপিএল-এর উদ্ভূত বিরোধ ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিইআরসি আইনের ৪০ ধারা আওতায় নিষ্পত্তি হওয়া আবশ্যক।
দশ. তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৫-২০০৬ সালে অর্থাৎ উল্লেখিত সম্পূরক চুক্তি সম্পাদনকালে আরইবি এসপিএল-এর মূল প্লান্টসমূহ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করেছে ২ টাকা ২০ পয়সা মূল্যহারে। তখন বিএসটি ছিল ২ টাকা ৫ পয়সা। যেহেতু সম্পূরক চুক্তি মতে সম্প্রসারিত প্লান্টসমূহের বিদ্যুৎ ক্রয় মূল্যহার : বিএসটি -৩ পয়সা। অর্থাৎ (২.০৫Ñ০.০৩) বা ২.০২ টাকা। সম্প্রসারিত প্লান্টসমূহের বিনিয়োগ মূল প্লান্টসমূহের বিনিয়োগের তুলনায় যে অনুপাতিক হারে কম হবে, সে হারেই বিদ্যুতের মূল্যহার কম হওয়া যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত। গ্যাসের দাম তেমন না বাড়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়েনি। এসআইপিপি বা আইপিপি পলিসির আওতায় ব্যক্তিখাত থেকে ৭৫ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে ক্রয়কৃত বিদ্যুতের মূল্যহার এখনো কম-বেশি ২ টাকার আশেপাশেই রয়েছে। তবে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হওয়াতে বিএসটি বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে এখন আরইবির জন্য ৪ টাকা ২৩ পয়সা। অথচ সম্প্রসারিত প্লান্টসমূহের বিদ্যুৎ গ্যাসভিত্তিক হওয়া সত্ত্বেও সম্পূরক চুক্তিতে যেহেতু বলা আছে এ বিদ্যুতের ক্রয় মূল্যহার হবে বিএসটি ৩ পয়সা, সেহেতু তা হবে ৪ টাকা ২০ পয়সা। অথচ এমন অসংগতির প্রশ্নে সম্পূরক চুক্তির যৌক্তিকতা ও আইনি বৈধতা বিবেচনায় আসবে না। এটাই যদি বিচার হয়, তাহলে সে বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ