তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় উপরে গেলে উল্টাপাল্টা হয়ে যায় : প্রধানমন্ত্রী
হুমায়ুন কবির খোকন : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের প্রশংসা করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের একটা গুণ আছে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। শুধু উপরে গেলে একটু উল্টা-পাল্টা হয়ে যায়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমি দেখেছি আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতারা ৮ দফা নিয়ে মেতে ওঠেন। কিন্তু আমার মা বলেন, উনি বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দিয়ে গেছেন, এর বাইরে একপাও যাওয়া যাবে না। শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির পিতার ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভার ভাষণে একথা বলেন। দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের বার্ষিক প্রকাশনা ‘জন্মভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সেসময় আমিও অনেক নেতার সঙ্গে তর্ক করেছি। আমাদের ধানমন্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে তর্ক করতে করতে অনেক সময় মিরপুর রোড পর্যন্ত চলে যেতাম। কিন্তু তারা বলতেন, তুমি ছোট মানুষ, তুমি এসব বুঝবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, নেতারা বঙ্গবন্ধুকে বোঝাতে না পেরে আমার মায়ের কাছে আসেন। তারা এসে সবচেয়ে জঘন্য কথাটি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে জামিনের অনুমতি না দিলে আপনাকে বিধবা হতে হবে। কিন্তু আমার মা তাদেরকে বলেছিলেন, বন্দি আরও অনেকেই আছে, তাদের স্ত্রীদের কথাও তো চিন্তা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য কাজ করেন। তিনি সসম্মানে ফিরে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ নিয়েও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেউ কেউ লিখিত পয়েন্ট দিয়েছেন। কিন্তু বাবাকে উদ্দেশ্য করে আমার মা বললেন, তোমার সামনে জনগণ, পেছনে ইয়াহিয়া খানের বন্দুক। কারও কথা শোনার দরকার নেই, তোমার মনে যে কথা আসে সেই কথা বলবা। কারও কথা শোনার দরকার নেই। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণে তাই বলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন তার সহধর্মীনি। স্বাধীনতার পেছনে বঙ্গমাতার অবদান অনেক। তাকে পাশে পেয়েছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা আনতে পেরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আব্বা কেন মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন এর জন্য কোনো অভিযোগ করেননি আম্মা। তিনি আব্বার প্রতিটি পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছেন। মায়ের মধ্যে কোনো হা-হুতাশ ছিল না। তার কোনো চাহিদা ছিল না। কোনো কিছু বলে বাবাকে তিনি বিরক্ত করেননি।
দলের জন্য বঙ্গমাতার অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি দল থেকে, সরকার থেকে কোনো কিছু নেননি। বরং দলের প্রয়োজনে নিজের গহনাগাটি পর্যন্ত তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। যেসব নেতা কারাগারে ছিলেন তাদের বাড়িতে গিয়ে বঙ্গমাতা বাজারখরচ দিয়ে আসতেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গমাতা খুনি মোশতাকের বাসায়ও বাজারখরচ পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাক গাদ্দারি করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে দেখি অনেকে রাজনীতিবিদ হয় অর্থকড়ি কামাই করতে, সমাজে প্রতিপত্তি বিস্তার করতে। কিন্তু জাতির পিতার রাজনীতি ছিল দেশকে কী দেবেন, মানুষকে কী দেবেন, এই চিন্তাই তার ছিল। আমরা প্রায়ই দেখি মন্ত্রিত্ব পাওয়ার জন্য দল ত্যাগ করে, আর বঙ্গবন্ধু দলের জন্য মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছেন। যারা দেশের ও মানুষের জন্য রাজনীতি করতে চান তাদের জন্য এটা একটি বিশেষ শিক্ষা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে শিক্ষা পেয়েছি বাবার কাছ থেকে, যে শিক্ষা পেয়েছি মায়ের কাছ থেকে, দেশকে ভালোবাসা, দেশের কল্যাণে কাজ করা, দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করা, যে কোনো ঝুঁকি নেওয়ার সাহস রাখা একজন রাজনীতিবিদের জীবনে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, খালেদা জিয়া, এরশাদ সকলেই জাতির পিতার খুনিদের মদদ দিয়েছে। ভোট চুরি করে তাদের সংসদে বসিয়েছে। তাদের নানাভাবে উৎসাহ জোগিয়েছে।
আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচিত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে আসব। তখন একটা জনমত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবেও সৃষ্টি হয়, মানুষের মাঝে একটা উদ্দীপনারও সৃষ্টি হয়। অনেক বাধা দিয়েছিল তবু আমি দেশে ফিরে আসি। এসময় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীকে শিক্ষিত হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়েই তো আমাদের তৈরি হতে হবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ