বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তামিজী : মানুষ যখন প্রকৃতির বিরুদ্ধে আচরণ করে, প্রকৃতি তখন প্রতিশোধ নেয়। আমাদের প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া বিষয় যেগুলোকে আমরা বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি বলছি, মূলত আমরা নিজেরা প্রকৃতির উপর যে অন্যায় করছি এগুলো তার ফল। আমরা বন কেটে উজাড় করছি, পাহাড় কেটে ধ্বংস করছি, সে কারণে আমরা আজকে এই সমস্যার মুখে পড়ছি । আমরা এটা সবাই চাই যে, নিজেরা আগে রক্ষা পাই তারপর অন্যদের কথা ভাবা যাবে। ভারত এবং নেপাল তারাও ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে। তদুপরি প্রশ্ন হল-আমাদের সঙ্গে ভারতের পানি নিয়ে যে হিস্যা, এজন্য সরকারের যে করণীয় সেটা সরকার যথাযথভাবে করতে পারছে কিনা? এর কারণ হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার ভারতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, কলকাতার বিভিন্ন প্রোগ্রামে গিয়ে মমতা ব্যানার্জির নানা ধরনের আশ্বাস পেলেও আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যার কার্যকর কোনকিছু পরিলক্ষিত হয়নি। যদি হতো, তাহলে আজকে এই পরিস্থিতির মুখে আমাদের পড়তে হতো না। আবার ভারত যে সুইচ গেট বন্ধ করে দিলেই আমাদের দেশে বন্যা হতো না, বিষয়টা আবার এরকমও না। কারণ, তারা গেট ওপেন করার আগে থেকেই আমাদের দেশে বন্যা এসেছে।
বন্যা পরিস্থিতির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমরা বন উজাড় করে ফেলেছি, আমরা পাহাড় কেটে ফেলেছি, প্রাকৃতিক সুরক্ষার সবকিছু আমরা নষ্ট করে ফেলেছি। আমাদের এখন এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। এখন আমাদের প্রত্যেকটা নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সহযোগিতা করা। এটা শুধুমাত্র একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবেই নয়, রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এটা আমার এবং আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াব। আমাদের সাধ্যমতো ত্রাণ নিয়েই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি, পানিবাহিত রোগ এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব। এই বিষয় নিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ল’ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী এডভোকেট এ এস এইচ এম হাবিবুর রহমান আজাদ এর নেতৃত্বে আমরা ত্রাণ বিতরণসহ বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বন্যা হলে শুধু ত্রাণ দেওয়াই কিন্তু মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে, ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি বন্যা পরবর্তী সময়ে বন্যার্তদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। সে ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। পানি যখন নেমে যাবে, তখন পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সবকিছু ঠিকঠাক করে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসাটা কষ্টসাধ্য।
মানবাধিকার ও সমাজল্যাণমূলক সংগঠনসহ সামাজিকভাবে সবাইকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য সহযোগিতা করা উচিত। আমাদের জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির কিছু কার্যক্রম সুধীমহলে সমাদৃত হয়েছে। এদিকে সরকার থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সেটা বন্যার্তদের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, যথেষ্ট ত্রাণ সহায়তা করা হচ্ছে। অথচ বলা হচ্ছে, তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ পাচ্ছে না। তাহলে এই ত্রাণ কোথায় গেল? সম্প্রতি বরাদ্দ করা হল ১০৫ কোটি টাকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে, এটার একটা সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে। সরকার যে পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহের কথা বলেছে, এটার সুষ্ঠু ব্যবহার হলে এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে আসলে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ল’ ফাউন্ডেশন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ