জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করলে রোহিঙ্গা সমাধান দ্রুত ও সহজ হতো
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : মেজর জেনারেল মো. আব্দুর রশীদ (অব.) মনে করেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিক স্বীকৃতি এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে অন্তত ইসলামিক দেশগুলোর সম্মেলন হওয়া উচিত। রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের কমিটিতে আলোচনার প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারলে সমাধানের পথে চলা দ্রুত ও সহজ হতো। বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা রোহিঙ্গা সমস্যাকে যৌক্তিকভাবে সমাধানের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কফি আনান কমিশনের রিপোর্টকে শান্তির ফর্মুলা হিসাবে মিয়ানমারকে সম্পাদন করতে উদ্বুদ্ধ করতে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
তিনি আরও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চাপ সৃষ্টির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবান নিঃসন্দেহে সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস্থাগুলোকে সেখানে আন্তর্জাতিক নজরদারিতা ও ব্যবস্থাপনায় স্কুল চালু করে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা, হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য আহবান জানানো।
তিনি আরও তুলে ধরেছেন, সমস্যা বাংলাদেশের না হলেও উত্থিত বিপদ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত নয়।
ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস (আই ক্ল্যাডস) এর রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন রশীদ।
আব্দুর রশীদ মনে করেন, সামরিক শাসকরা ক্ষমতা ধরে রাখার সস্তা ও সহজ উপায় হিসাবে ধর্ম ও বর্ণ ভিত্তিক উগ্রজাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করেছে মিয়ানমারে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার পরিবর্তে তাদের উৎপাটিত করার নীতি অনুসরণ করেছে। রোহিঙ্গাদের শুধু অধিকার বঞ্চিত করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তাদের জীবনের নিরাপত্তাকে করেছে বিপন্ন। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে।
তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মূলত মিয়ানমারের মাটিতে এবং স্থায়ী সমাধান মিয়ানমারকেই খুঁজতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের আপদ হিসাবেই চিহ্নিত। রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতা নেই বললেই চলে। অং সান সুচি শান্তির নোবেলধারী হয়েও নিজ দেশে অবহেলিত ও নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো ভূমিকাও রাখতে সমর্থ হয়নি।
রোহিঙ্গা সমস্যা ওতপ্রোতভাবে বাংলাদেশকে জড়িয়ে বাড়ছে, সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকতে পারবে না। এই এলাকায় মাদক চোরাচালান চক্র অত্যন্ত সক্রিয় এবং সীমানার উভয় দিকে তাদের প্রভাব বিস্তৃত। অবৈধ অস্ত্রের একটা বড় বেচাকেনার সমারোহ রয়েছে। মিয়ানমার সেনা ও সীমান্ত রক্ষীদের একটি বড় অংশ সুবিধাভোগী। শান্তি স্থাপিত হলে সেনা কর্তৃত্ব খর্বের আশংকা থাকবে ফলে সেনাদের সহযোগিতা পাওয়া দুরূহ।
সংকটের সমাধান প্রসঙ্গে মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে অধিকতর আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করা জরুরি। পারস্পরিক শঙ্কার জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে শঙ্কা মুক্ত করার কৌশল যৌথভাবে খুঁজতে হবে। দুই দেশের সাধারণ ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে ঝুঁকি নির্মূলে যৌথভাবে কাজ করার কৌশলে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও জঙ্গিবিরোধী অভিযান আস্থা তৈরিতে অবদান রাখে। জঙ্গিবিরোধী যৌথ অভিযানের বাংলাদেশি প্রস্তাব খুব বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সূচক হিসাবে কাজ করবে।