আন্তর্জাতিক গণআদালত সম্পর্কে কিছু তথ্য
কামরুল আহসান : রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার দায়ে রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক গণআদালত। আন্তর্জাতিক গণআদালত বা পার্মানেন্ট পিপসল ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) থেকে দেওয়া রায়টি হয়তো বাস্তবসম্মতভাবে কার্যকর হবে না। আসলে এটি একটি প্রতীকী বিচার। যেসব অপরাধ রাষ্ট্রীয়ভাবে দামাচাপা পড়ে যায় আন্তর্জাতিক আদালত তা সামনে নিয়ে আসে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাই এ আদালতের মূল লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক গণআদালত বা পার্মানেন্ট পিপসল ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) আসলে কী তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আগ্রহ জেগেছে। এই আদালতটি প্রথম গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে। ইতালিয়ান দার্শনিক ও আইনবিদ লিলিও বাসো প্রথম ল্যাটিন আমেরিকার যুদ্ধে গণহত্যার বিচার করতে এ আদালতটি গঠন করেন। তবে তারও আগে এ ধরণের গণ আদালত গঠন করেন ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল। সেটি রাসেল ট্রাইব্যুনাল নামে পরিচিত। ভিয়েতনামের যুদ্ধে গণহত্যা চালানোর দায়ে মার্কিন সৈন্যদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বার্ট্রান্ড রাসেল এটি গঠন করে ১৯৬৬ সালে। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের আদালত অস্বীকার করে। কিন্তু বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন, অনেক যুদ্ধ ও গণহত্যার দায়ে অনেক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের কোনোদিন বিচার হয় না, কিন্তু মানবতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং আইনকে সুমর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে অবশ্যই এ ধরনের বিচার দরকার আছে।
বার্ট্রাল ট্রাইব্যুনালের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন লিলিও বাসো। তিনিও ল্যাটিন আমেরিকার স্বৈরাচারী সরকারদের বিরুদ্ধে এই আইনটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর বিশ্বের প্রতিথযশা আইনবিদ মানবাধিকার কর্মীগণ পার্মানেন্ট পিপসল ট্রাইব্যুানাল বা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এ ধরনের বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। এ পর্যন্ত এ আদালত থেকে ৪৩ টি প্রতীকী বিচারিক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে। এর প্রধান কার্যক্রম রোমের বোলগনায়। মিয়েনমারের বিরদ্ধে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে।
মালয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এ ট্রাইব্যুনালের ৭ জনের প্যানেলে সভাপতি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলালসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আর্জোন্টিনার দানিয়েল ফিয়েরেস্তেইন। অন্যরা হলেন মালয়েশিয়া জুলাইহা ইসমাইল, কম্বোডিয়ার আইনবিদ হেলেন জার্ভিস, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিভাগের সাবেক প্রধান জিল এইচ বোয়েরিঙ্গার, ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী নুরসিয়াবানি কাতজাসুংকানা, ইরানের মানবাধিকার আইনজীবী সাদি সদর এবং ইতালির সুপ্রিম কোর্ট অব ক্যাসেসনের বর্তমান সলিসির জেনারেল নিলো রেসি। পিপসল ট্রাইব্যুনালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও এই শুনানিতে বিবৃতি দেন।
১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পাঁচদিন এই গণ আদালতের শুনানি চলে। শুক্রবার এ আদালত থেকে রায় দেওয়া হয়। এ রায় ঘোষণার জন্য মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, কাচিন, কারেনসহ বিভিন্ন সংখ্যালুঘু জাতিগোষ্ঠির ২০০ জন মানুষের জবানবন্দি নেওয়া হয়। মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাতজন বিচারকের প্যানেলে রায়টি ঘোষণা করা হয়। রায়টির কার্যকর অংশ পাঠ করেন অস্ট্রেলীয় বিচারক জিল এইচ বোয়েরিঙ্গার। এই রায়ে সর্বসম্মতিক্রমে ১৭টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এতে মিয়ানমারের ওপর অবিলম্বে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিয়ানমারের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। স্টার অন লাইন, উইকিপিডিয়া।