বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও প্রতিমা ভাঙচুর তবুও এবছর বেড়েছে সার্বজনীন দুর্গাপূজা
বিশ্বজিৎ দত্ত : যারা পূজায় বা মন্দিরে হামলা করে তাদের বিচার হয় না। দেশে এই একটি বিষয়ে মনে হয় দায়মুক্তির সংস্কৃতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। গতকাল দুর্গাপূজায় হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়ে এ মন্তব্য করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণাদাশ গুপ্ত।
তবে এবারের দুর্গাপূজায় এ ধরনের কোনো সংস্কৃতি দেখা যাবে না বলে গতকাল টেলিফোনে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, পুলিশের আইজিকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছেÑ দেশের প্রত্যেকটি পূজাম-পে নিরাপত্তা দিতে। অপরাধী যেই হোক তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিসাবে দুর্গাপূজার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে ৮টি। এর মধ্যে মাগুরায় সবচেয়ে বেশি ৪টি মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। গাজীপুরে ১টি, নারায়ণগঞ্জে ১টি, দিনাজপুর ও মানিকগঞ্জে একটি করে মন্দিরে হামলা হয়েছে। এর বাইরে গতকাল ফরিদপুরে ৭টি ইউনিয়নে কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তাপস পাল মনে করছেন, ফরিদপুরের ঘটনাও পূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সেখানে যেন অনুষ্ঠানে সমস্যার সৃষ্টি হয় এর জন্যই আগে থেকে হুমকি। উল্লেখ্য, গত ১০ বছরে শুধুমাত্র দুর্গাপূজায় হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে ৪০০টি। এর একটিতেও কোনো গ্রেফতার নেই। থানায় এ বিষয়ে কোনো মামলাও নেই।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তাপস পাল জানান, এবছর দেশে দুর্গাপূজা হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৭টি। যা গত বছরের চেয়ে ৬৮২টা বেশি। এবারে অন্যবারের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। এর পরেও কিছু জায়গায় হামালা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক প্রত্যেকটা পূজা মনিটরিং করছি। যেখানেই কোনো সমস্যা হচ্ছে সেখানেই যাচ্ছি।
হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণাদাশ গুপ্তও স্বীকার করেছেন, এবারে পূজার নিরাপত্তা অনেক ভালো। বরাবর সেখানে ৩০ থেকে ৪০টা পূজার আগেই প্রতিমা ভাঙচুর হতো এবারে তা কমে ৮-১০টা হয়েছে। তিনি মনে করেন, যদি এইসব হামলার বিচার হতো তবে তা আরো কমে আসতো। আগে এই ঘটনায় কোনো মামলা নেওয়া হতো না। দুএকজনকে গ্রেফতার করা হতো, পরে তাদের পাগল বলে ছেড়ে দেওয়া হতো। এখন অবশ্য পুলিশ দু’চারজনকে গ্রেফতার করে। তবে চার্জশিট দেওয়ার সময় লিখে দেয়Ñ কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি। এটি মনে হয় একটা বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
পূজায় হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর দীর্ঘদিন ধরে চলছে, এমনকী বিএনপির সময়েও হয়েছেÑ এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, দুর্গাপূজায় হামলা হলে এর শাস্তির বিধান রয়েছে। পূজায় শুধু হিন্দুরা যায় না। মুসলমানরাও তো যায়, আমরাও যাব। আমরা পূজায় অংশগ্রহণও করবো। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী