শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদ রাখতে হবে
অজয় দাশগুপ্ত
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে মানুষের সচেতনতা তুঙ্গে। আগেও লিখেছি দলের চাইতেও তার ইমেজ বড় এখন। তিনি নিজগুণে তা তৈরি করেছেন। একটা সময় ছিল যখন এমনও শোনতাম বা বিশ্বাস করা হতো তার অতিকথন বা বক্তব্য নাকি দলের জন্য অহিতকর। সে বদনাম যে মিথ্যা সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন ধারাবাহিকভাবে দুবার দেশ শাসনে আসার পর। এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন আর তিনি সমার্থক। এটাও দেখছি তাকে হেয় বা ছোট করার রাজনীতি কেমন গুটিয়ে গেছে। একজন মানুষের সবকিছু ভালো হতে পারে না। রাজনীতি কাউকে মানবের ওপরে তুললেও না। তিনি তার মতো। তবে এটা মানতেই হবে যে, প্রাজ্ঞতা আর দূরদর্শিতায় তিনি এখন আছেন বা উঠেছেন সেখানে বাংলাদেশ তাকে ছাড়া মূলত অভিভাবকহীন। একসময় আমাদের নেতারা বিদেশের নেতাদের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বিনয়ের অবতার হয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাতেন। এখন দেখুন জার্মানির মতো দেশের নির্বাচনে এন্জেলার বিলবোর্ড বা পোস্টারে তার সঙ্গে ছবি দেওয়া হয়। কানাডার জাস্টিনের সঙ্গে ছবিগুলো মজার। শেখ হাসিনাকে মায়ের মমতা দিয়ে ভালোবাসা বা অবলোকনের ছবিগুলো দেখলে জাস্টিন ট্রুডোকে মনে হবে শিশু। সেদিন দেখলাম ট্রাম্পও ঝুঁকে পড়ে তার সঙ্গে বেশ সময় নিয়েই কুশল বিনিময় করলেন। ঝববরহম রং নবষরবারহম মানলে বুঝতে কষ্ট হবে না দিন ঘুরছে। চাকা ঘুরছে সময়ের। সেই বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশে অনেক ফারাক। আর এই তফাৎ রচনা করার মূল নেতা শেখ হাসিনা।
ফলে তার কুশল ও নিরাপদ থাকা না থাকা নিয়ে জনমনে উদ্বিগ্নতা থাকাটা স্বাভাবিক। তিনি যখন জাতিসংঘে তখনো আমরা আমাদের দেশের বহুল প্রচলিত নামের দৈনিকটিতে আলো অন্ধকারে আবারো ষড়যন্ত্রের মুখ দেখেছি। তারা বলতে চেয়েছিল, বাংলাদেশ বন্ধুহীন। আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় নাকি আসনগুলো খালি ছিল। পরে অবশ্য সে খবর তুলে নেওয়া হয় ইন্টারেট ভার্সন থেকে। যা বলছিলাম, শেখ হাসিনা যখনই কোনো সফরে যান আমরা দেখি এক ধরনের ষড়যন্ত্র আর তার ওপর আক্রোশের খবর বেরিয়ে আসে। একবার শুনলাম খাদ্যে নাকি বিষ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আর একবার আকাশে পায় সমূহ বিপদের হাত থেকে বেঁচে আসেন তিনি। চাকা খোলা থেকে চাকা বন্ধ এসব চক্রান্তের লোকেরা থেমে নেই। এবারের বোমটি ফাটিয়েছিল কলকাতার সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক। তার প্রতিবেদন পড়লে কিছুতেই মনে হবে না অসত্য। তাছাড়া এর বিস্তৃতি ও ভয়াবহতা আমাদেরকে আক্রান্ত করবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা অনেকে তা শেয়ার করেছি এই ভেবে যাতে মানুষ সতর্ক হতে পারেন। এর সঙ্গে ছিল প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভালোবাসা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এটি এত দ্রুত এতবেশি প্রচারিত হয় যে এর সন্দেহ নিরসনে একাত্তর টিভি সুবীর ভৌমিককেও নিয়ে আসে পর্দায়। তিনি অবশ্য এখনো বলছেন, জেনে বুঝেই রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন তিনি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এটিকে গুজব বলা হয়েছে। এবং এ ধরনের কিছু প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সাবধানও করা হয়েছে।
আমরা অবশ্যই তাদের কথা বিশ্বাস করতে চাইবো। এও চাই এ ধরনের খবর গুজবই হোক। কারণ আমরা খুব ভালো জানি, আমরা না চাইলেও অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হবে না। এই দেশ ও আমাদের ইতিহাস বলে যারা দেশ ও দশের জন্য কাজ করেছেন, করছেন কিংবা অবদান রেখেছেন তাদের কাউকেই ছাড় দিইনি আমরা। কে না জানে আমাদের দেশের প্রতিক্রিয়াশীল চক্র কত শক্তিশালী। তারা যেমন অপপ্রচারে এককাঠি সরেস তেমনি তাদের নেটওয়ার্কও কম না। তাদের হাতে আছে অঢেল অর্থ। বিভিন্ন দেশের মদত পাকি গোয়েন্দাসহ আমাদের দেশের বিপথগামী রাজনীতি। গদিতে না থাকার ক্রোধে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ার যন্ত্রণা কাতর মা-পুত্রের নামও আছে দেখলাম। একুশে আগস্ট যেহেতু সত্য আমরা কিছুতেই কারো জড়িত থাকা না থাকার বিষয়টা সহজে উড়িয়ে দিতে পারি না। মনে রাখা উচিত, প্রেস রিলিজে স্বস্তি আছে কিন্তু ভয় কাটাতে লাগবে সতর্কতা আর আন্তরিক ভালোবাসা। দেশে দেশে অঘটনগুলো ঘটায় বা ঘটিয়েছে কাছের মানুষেরাই। তাদের ছাড়া কোনো ষড়যন্ত্র কোথাও কোনোদিন সফলতার মুখ দেখেনি।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই এ প্রতিবেদন ছিল বানোয়াট বা গুজবের অংশ। আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অন্ধ সমর্থন না করলেও বিশ্বাস করি তিনি ছাড়া এই দেশ ও সমাজ এখন কিছুতেই এমনভাবে চলতে পারবে না। আর যারা যেন-তেন প্রকারে নিয়ম অনিয়মের বাইরে তার বিদায় চায় তাদের কাউকে না কাউকে আমরা হররোজ দেখি। মোকাবিলা করি। এরা ধূর্ত ও মধ্যপন্থী। এদের মুখে এক আর ভেতরে আরেক। শেখ হাসিনার উন্নয়নের সবকিছু ভোগ করা মানুষগুলোই আসলে মুখোশধারী। তাই আমরা নিশ্চিত হতে চাই এই খবর ছিল আসলেই ভুয়া। কারণ এখন শেখ হাসিনার বিকল্প যেমন আওয়ামী লীগে নেই বা তৈরি হয়নি, তেমনি তিনি ছাড়া এই সমাজের পরিণাম হবে ভয়াবহ। যারা মুখ বুজে চোখ বন্ধ করে আছেন তারাও বাঁচতে পারবেন বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নিরাপত্তা ও ভালোথাকাটা জরুরি।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ও কলামিস্ট