নড়াইল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেয়রসহ ৮ জনের কারাদন্ড
এম এ আর মশিউর, যশোর: যশোর আদালতে নড়াইল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেয়রসহ ৮ জনপ্রতিনিধির কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি মামলায় নড়াইলের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন, নড়াইল পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাসসহ ৮ জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। তাদেরকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও এক লাখ ৯৬ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক নিতাইচন্দ্র সাহা এ রায় ঘোষণা করেন। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাকে পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা মঙ্গলবার আদালতে হাজির হন। কারাদন্ডপ্রাপ্তদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
মিয়ানমার সেনাপ্রধানের ন্যাশনাল রেসে কারা!
(প্রথম পৃষ্ঠার পর) মুসলিমদের তাদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাননি তেমনি সুচিও বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে জোড়াল কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। উল্টো তার দলের কর্মীরা রেঙ্গুন ও মান্দালার মুসলিমদের সাবধান করে দিয়েছে, তারা যেন মসজিদে রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো দোয়া না করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা যেন মিছিল-মিটিং না করেন। অর্থাৎ রোহিঙ্গা মুসলিমদের দমন-পীড়ন, নির্যাতন নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারবেন না। সুচির রাজনৈতিক দল থেকে এমন গোপন তৎপরতা চলার কারণে মিয়ানমারে বসবাসরত সব মুসলমানই এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা আশঙ্কা করছেন যে কোনো সময় তাদের উপরও নির্যাতনের খড়গ চালিত হতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছেÑ সেনাপ্রধান কথিত মিয়ানমারের ন্যাশনাল রেসে কারা? সেনাবাহিনী তাদের পঞ্চাশ বছরের শাসনামলে আগের গণতান্ত্রিক সংবিধান বাতিল করে প্রশাসনে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য নতুন সংবিধান রচনা করেন। সেই সংবিধানের বিধি মোতাবেক অং সান সুচি দেশটির প্রধান হতে পারছেন না। এই সংবিধানের বলে ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্বও খারিজ করা হয়। এর আগে রোহিঙ্গা মুসলিমরা দেশটির নাগরিক ছিলেন।
পক্ষান্তরে কাচিন রাজ্যের প্যানলং সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে স্বাধীন বার্মা ইউনিয়নের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে উ চান টুনকে উপদেষ্টা মনোনয়ন করে একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৪৬ সালের ১৪ জানুয়ারি জেনারেল কাউন্সিল অব বার্মা মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন (জিসিবিএমএ) নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ গভর্নর সমীপে বার্মা ইউনিয়নের স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়ায় মুসলমানদের অধিকার বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র অধিকারনামা ঘোষণার দাবি জানায়। এতে ব্যর্থ হলেও পুনরায় ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট প্রস্তাবিত সংবিধানে একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবে বার্মার মুসলমানদের স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানিয়ে বার্মার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী উ নু-এর কাছে চিঠি পাঠান। ২ অক্টোবর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির উপদেষ্টা উ চান টুন জিসিবিএমএ-এর সভাপতি বরাবরে প্রেরিত চিঠির উত্তরে উল্লেখ করেন ‘বার্মা ইউনিয়নের সংবিধান অনুসারে যে সমস্ত মুসলমান বার্মায় জন্মগ্রহণ করেছে, বার্মায় লালিত পালিত হয়েছে, বার্মায় শিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং যাদের পিতা-মাতা বা পিতা-মাতার যে কোনো একজন বার্মার নাগরিক তাদের সবাই বার্মার নাগরিক।’
বার্মা ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। অতঃপর ১৯ নভেম্বর বার্মার অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো মুসলমানদের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানিয়ে জিসিবিএমএ-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। প্যানলং সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে শান, কাচিন, কায়া, কারেন ও চিন রাজ্যগুলো অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পেলেও বোধাপায়ার দখল করা আরাকান এক ইঞ্চিও শৃঙ্খলমুক্ত হয়নি। যে স্বপ্ন আর প্রত্যাশায় মুসলমানরা স্বাধীনতা আন্দোলনের জাতীয় নেতা সুচির পিতা জেনারেল অং সানকে সমর্থন দিয়েছিল, শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, মুসলমানদের ধর্মচ্যুতিকরণ ও সাংস্কৃতিক আত্মীকরণের নামে স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার বিনাশ সাধন করে ব্যাপকভাবে বর্মীকরণ প্রক্রিয়ায় তাদের সেই প্রত্যাশা গভীর হতাশায় রূপান্তরিত হয়।
মিয়ানমারের অন্তর্ভুক্ত রাখাইন রাজ্য তথা আরাকানের ইতিহাস পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে। বর্মিরাজ বোধাপায়া আরাকানকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত করার পূর্ব পর্যন্ত দেশটি চলেছে এক রকম। বোধাপায়ার আমল থেকে আরাকানের চেহারা বদলে যেতে থাকে। বার্মায় ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে এসে বার্মার প্রশাসন নতুন মোড় নেয় যখন ১৯৪২ সালে দেশটি জাপান দখল করে নেয়। জাপানের দখলের সময় তাদের সঙ্গে থাকে বার্মা ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি। জাপানিরা বার্মা ছেড়ে যায় ১৯৪৫ সালে। এই সময়ে বার্মায় লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে এবং হত্যা, নির্যাতন এবং ধর্ষণ চালায় ব্যাপকভাবে, যা তারা করেছিল কোরিয়ায়। আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমরা তাদের হাতে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়। সহ্য করতে না পেরে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলায় এসে আশ্রয় নেয়। এসময় ব্রিটিশ সরকার বাস্তুহারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য রংপুরের সুবীর নগরে একটি উদ্বাস্তু শিবির খোলে। কিন্তু উত্তর আরাকান থেকে বহু দূরের রংপুরে উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে একটি ক্ষুদ্র অংশই কেবল শিবিরে এসে পৌঁছায়। এখন জাপান সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের পুনর্বাসনের জন্য মিয়ারমারকে এক মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। কিন্তু যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে সে দেশের সরকার, তারা কী করে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সেই অর্থ ব্যয় করবে। যদি প্রকৃতই জাপান সরকার রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে চায় তাহলে মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর সেদেশের সেনাপ্রধান ‘ন্যাশনাল রেস’ বলতে কী বুঝিয়েছেন তাও তাকেই স্পষ্ট করতে হবে। তবে তার ‘ন্যাশনাল রেস’ যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয় তাও বিশ্ববাসী স্পষ্টই অনুমান করতে পারছেন।