আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনাবলী
আবু তালহা তারীফ
আশুরা কি? পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে ১০ই মুহররম তথা আশুরার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। মহররমের দশম তারিখ আশুরা নামে পরিচিত। আরবি আশারা শব্দ থেকে আশুরা শব্দের উৎপত্তি। আশারা মানে দশ আর আশুরা অর্থ হল হল দশম দিবস। এ মাসের সন্মানে আরবরা অন্যায়,যুদ্ধ বিগ্রহ ও রক্তপাত থেকে বিরত থাকত। তাই এ মাসের নাম করন করা হয়েছে মুহররম। এটি আরবি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ।
আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনাবলি হচ্ছে, ১. আশুরার দিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র লওহে মাহফুজ সৃষ্টি করেছেন ২. এই দিনে যাবতীয় সুষ্টির রুহ পয়াদা সৃষ্টি করেছেন। ৩. এই দিনে হজরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। ৪. হজরত আদম (আ:) এর তাওবা কবুল করা হয়েছিল। ৫. আদম (আ:) কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল। ৬. হজরত নুহ (আ:) মহাপ্লাবনের শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরন করে। ৭. হজরত ঈব্রাহিম (আ:) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল ৮. হজরত ঈব্রাহিম (আ:) এই দিনে আগ্নিকুন্ড হতে নাজাত পেয়েছিলেন। ৯. হজরত ঈমূসা (আ:) তুর পর্বতে আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন। ১০. হজরত মূসা (আ:) কে তাওরাত কিতাব নাযিল করা হয়েছিল। ১১. হজরত মূসা (আ:) এর শত্রু ফিরাউনের নীল নদে ভরাডুবি হয়েছিল আশুরায়। ১২. হজরত আইয়ুব (আ:) এই দিনে রোগ থেকে মুক্তি পান। ১৩. হজরত ইয়াকুব (আ:) তার প্রিয় পুত্র ফিরে পান। ১৪. হজরত ইউনুস (আ:) কে মাছের পেটের থেকে দজলা নদীতে পরেছিলেন এই দিন ।
১৫. হজরত সুলাইমান (আ:) পূনরায় রাজত্ব ফিরে পান। ১৬. হজরত ঈসা (আ:) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং ১৭. হজরত ঈসা (আ:) কে আকাশে তুলে নেওয়া হয় এই দিনে। ১৮. হজরত জিব্রাইল (আ:) সর্বপ্রথম আল্লাহর রহমত নিয়ে রাসুল(স:) এর নিকট আগমন করেছিলেন। ১৯. রাসুল (স:) এর প্রিয় নাতী হজরত হোসাইন তার সঙ্গী ও সহচর গন কারবালার ময়দানে শহীদ হন। ২০. আশুরার কোন এক শুক্রবার ঈস্রাফিল (আ:) এর সিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন এবং পৃথিবী ধ্বংস হবে। আশুরার রোজা : রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজার ফরজিয়্যাত রহিত হয়ে যায় এবং তা নফল হয়। রাসুল (স:) এ নিয়মে রোজা রাখতেন । এরপর যখন তিনি হিজরত করে মদিনায় গেলেন তখন রাসুল (স:) দেখলেন, ইয়াহুদিরা এই দিনে রোজা পালন করছে, রাসুল (স:) কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এই দিনে আমাদের নবী হজরত মুসা (আ:) জালেম ফিরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তাই আমাদের নবী মুসা(আ:) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য এ দিন রোজা পালন করতেন। এ জন্য আমাদের নবীর অনুসরন করে আমরা এই দিনে রোজা পালন করি। তখন রাসুল (স:) বললেন “আমরাই বেশী হকদার মুসা (আ:) এর সাথে সুসম্পর্কের”।
রাসুল (স:) এই দিনে রোজা পালন করলেন এবং ইয়াহুদিদের সাথে মুসলমানদের সামঞ্জস্য না হয় সে জন্য তিনি তার সাথে একদিন মিলিয়ে রোজা রাখতে বললেন। রাসুল (স:) বলেন,“ তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইয়াহুদির সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে একদিন রোজা রাখ”(মুসনাদে আহমদ ১ম ,২৪১ পৃষ্ঠা)
সুতারাং আশুরার রোজা পালন করা মুস্তাহাব যদি কেউ পালন করে তাহলে সে অজস্র সাওয়াবের অধিকারী হবে তার গুনাহ মহান আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন। রাসুল(স:) বলেন, “আমি আশাবাদি যে, আশুরার রোজার কারনে আল্লাহ তায়ালা অতীতের একবছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন”। (মুসলিম ১/৩৬৭পৃষ্ঠা)