জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে নিয়েই রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে হবে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ক আলোচনাকে অনেকেই ব্যর্থ বলছেন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবশালী দুই দেশ চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের প্রতি নমনীয় হওয়ায় জাতিসংঘ সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। তবে এর জন্য এই বৈঠককে একেবারেই ব্যর্থ বলা যাবে না। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে নিয়েই বাংলাদেশকে এবার স্থায়ীভাবে সংকট সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বকে এক কাতারে এনে দাঁড় করানোর জন্য সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার হয়ে যাওয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক থেকে সরাসরি কিছু না পাওয়া গেলেও চীন ও রাশিয়া তো ঘটনাটি স্পষ্ট শুনেছে। হয়তো এই দুটি দেশ তাদের অবস্থানের পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও অনুসন্ধানী দল গঠন করে তদন্ত করতে বলেছেন। আমাদের এখন কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। এটা শুধু বাংলাদেশ মিয়ানমারের সমস্যা নয়। এটি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধনের বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। এখন জাতিসংঘকে নিয়ে মিয়ামানমারের উপর চাপ আরো বাড়াতে হবে।
মিয়ানমারের সাবেক কূটনীতিক মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ কুমার চাকমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আমাদের মনে কথাই বলেছেন। এর প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। এখন কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে বলেছেন। জাতিসংঘ পাঠিয়েছে, কিন্তু মিয়ানমার তাদের ঢুকতে দেয়নি। এটাও তো বিশ্ব দেখলো। একটি দেশ সব দেশকে তোয়াক্কা না করে দুই দেশের উপর ভিত্তি করে চলতে পারবে না। এর আগে অং সান সুচিও অনুরূপ দলকে আহ্বান করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও রোহিঙ্গা গবেষক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। মিয়ানমারের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে পেরেছে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে। এটাকেও সফলতা বলা যেতে পারে। তবে চীন ও রাশিয়ার কারণে আক্ষরিক যে সফলতা তা পাওয়া যায়নি। আশা করছি, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে চীন ও রাশিয়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের মত পাল্টাবে।
এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সাবেক কূটনীতিক মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিচার সম্ভব। এ ধরণের গণহত্যার বিচারের জন্য বিশ্বে একটি স্থায়ী আদালত সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৯৯৮ এর অনুচ্ছেদ ১৩ অনুযায়ী আইসিসিতে বিচার করা সম্ভব। নিরাপত্তা কাউন্সিল রেজুলেশন পাস কোনো বিষয়কে যদি রেফার করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) এ বিচারের জন্য পাঠায়; সেক্ষেত্রে বিচার করা সম্ভব। তবে অং সান সু চি মূলত ক্ষমতাহীন। মূল ক্ষমতা সেনাপ্রধানের হাতে। সেনাপ্রধান একটি জাতির বিরুদ্ধে আরেকটি জাতিকে লেলিয়ে দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এখন দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে দাবি জোরালো করা। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ