যতœবান হোন শিশুর খাবার তৈরি এবং পরিবেশনের ক্ষেত্রে
ডা.জাকির হোসেন
আজকাল বাচ্চারা খাওয়া-দাওয়া একেবারে করে না বললেই চলেÑ প্রায় সব মায়েরাই এ কথাটি বলেন। বাচ্চা না খেয়ে দিনে দিনে শুকিয়ে যায়। শিশু বিশেষজ্ঞদের কাছে যত রোগী আসে তাদের প্রত্যেকেরই মায়েরা এই সমস্যাটির কথা আগে বলে। শিশুদের খাবার তৈরি পরিবেশন এবং কতটুকু খাওডাতে হবে তা প্রত্যেক মায়েদেরই জানা উচিত। ৬ মাস প্রর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে এই শতসিদ্ধ কথা প্রায় সকল মায়েরাই জানেন। কিন্তু ৬ মাস পরবর্তী শিশুর কীভাবে অন্যান্য খাবার শুরু করতে হবে তা বেশিরভাগ মা-ই জানেন না। ৬ মাস পর যখন বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার শুরু করা হবে সর্বাগ্রে জরুরি অল্প অল্প করে শুরু করা। খাবার শুরু করার সময় হেরফের হলে এতে শিশুর অনেক জটিলতা তৈরি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা এতে এক ধরনের জটিলতা অনেক সময় ঘটে থাকে তাকে ইনটোসাসেপ্রশন বলে। এতে শিশুর জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়। এই সময় থেকে মায়ের দুধের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে শিশুকে শক্ত, আধাশক্ত বা নরম খাবারে অভ্যস্ত করা আবশ্যিক। বেশির ভাগ বাবা মা-ই শিশুর বাড়তি খাবার বলতে খিচুরিকে বোঝে থাকেন। এটা মোটেই সঠিক ধারণা নয়। শিশুর রুচির প্রাথমিক সেনসেশনগুলো ভাল করে মস্তিষ্কে তৈরি করার মতো প্রয়োজনীয় খাবার শিশুর মুখে প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে শিশুর রুচি ধীরে ধীরে তৈরি হবে। এবার আসা যাক কীভাবে খাবার তৈরি করতে হবে। শিশুর খাবার তৈরির সময় সর্বাগ্রে খেয়াল রাখা উচিত, গরম মসলা এবং মরিচ জাতীয় খাবার উপাদান যাতে ভুল করেও শিশুর খাবারে না দেওয়া হয়। এতে করে শিশুর পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন পরিকল্পনা করে খাবারে বৈচিত্রে আনতে নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ ধরুন ৬-৮ মাস বয়সি শিশুর ব্রেকফাস্টে গম, ডালিয়া, সুজি, বাজরা সেদ্ধ করে তার সঙ্গে তেল, ঘি, মাখন যোগ করা। কলাচটকে মাখা দেওয়া যেতে পারে। দুপুরে বা রাতের খাবারে এর সঙ্গে মিশবে সিদ্ধ সবজি বা চটকানো/ সিদ্ধ ফল, গরম দুধে মেশানো খই। সন্ধ্যের স্বল্পাহারে থাকবে সিদ্ধ কুমড়ো, পেঁপে/আলু ও সিদ্ধ চটকানো আপেল/ নাসপাতি। প্রতিদিন একই স্বাদ এবং একই জাতীয় খাবার শিশুর খাবারের অনীহার অন্যতম কারণ। উপরের উল্লেখিত খাবারের নামগুলো দিয়ে নিজেই প্রতিদিন বৈচিত্র আনার চেষ্টা করেবেন। খাবার পরিবেশন এবং কি পরিমাণ খাবার প্রতিবার শিশুকে কাওয়াতে হবে এ ব্যাপারে একেবারেই সচেতন না আমাদের দেশের মায়েরা। সব মায়েরাই অন্যান্য কাজে সময় দেওয়ার জন্য খুব অল্প সময়ে শিশুকে কীভাবে অধিক পরিমাণ খাবার খাওয়ানো যায় সে চেষ্টা করে থাকেন। এটা একবারেই ভ্রান্ত ধারণা। বাস্তবতা হলো শিশুর পাকস্থলীর খাদ্য ধারণ ক্ষমতা একেবারেই কম। তাছাড়া খাদ্যনালী শিশুদের অনেকটা সোজা থাকে যা শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা অ্যাংগেল হয়ে যায়। যার ফলে মায়েদের এই প্রচেষ্টার জন্য শিশুরা খাবার পেটে খাবার ধরে রাখতে পারে না। বমি করে খাবার ফেলে দেয়। সঠিক নিয়ম হলো বাচ্চাকে সময় নিয়ে খাওয়াতে হবে এবং পরিমাণের বেশি না খেতে দিয়ে ২-৩ ঘণ্টা অন্তর অন্তর খাবার পরিবেশন করা। সুস্বাস্থবান শিশুর জন্য যতœবান হোন শিশুর খাবার তৈরি এবং পরিবেশনের ক্ষেত্রে। না জানলে চিকিৎসকের কাছ থেকে শিখে নিন ও প্রয়োজনীয় টিপস নিন।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান