সতর্কতায় রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করতে হবে
ড. ফোরকান উদ্দিন আহমদ
মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীকে প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে হয়। এছাড়াও অন্য প্রতিবেশীকেও প্রতিবেশীসুলভ আচরণের জন্য পরামর্শ, এমনকি চাপ সৃষ্টি করতে হয়। প্রয়োজনে নিন্দা জ্ঞাপন ও সহযোগিতার ধার রুদ্ধ করার জন্য হলেও এগিয়ে আসতে হবে। ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারণ কর্ম সংগঠিত হতে থাকে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে অনেক রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া হলেও তা পুরাপরি সম্পন হয়নি। এবারের বিতারণ কর্মটি ছিল চরমভাবে মানবতাবিরোধী, হিংসাত্মক, নির্মম, নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত। বাড়িঘর জ্বালানো-পোড়ানো, গণহত্যা, গণধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও ব্যভিচার ইত্যাদিসহ নানা ধরণের জুলুম সংগঠিত হচ্ছে মায়ানমারের পক্ষ থেকে।
জাতি হিসেবে আমরা অতি সহনশীল ও সংবেদনশীল। আমাদের সরকার রোহিঙ্গাদের সাহায্যে হাত বাড়িয়েছে। সাহায্যপ্রার্থীদের ব্যাপারে বরাবর বাংলাদেশ উদার ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের জনগণ সর্বদাই শরণার্থী ও উদ্বাস্তদের পাশে থেকেছে এবং থাকবে। মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বর্বরোচিত অত্যাচারে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গাদের এমন দুর্দিনে বিশ্বের কোনো সুস্থ্য জাতিই পেছনে ফিরে থাকবে না। আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা বিশ্ব বিবেককে ভাবতে হবে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য শিশু খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ব্যবস্থাসহ সকল প্রয়োজনীয় ত্রাণ, সেবা ও সাহায্যের হাত বাড়াবে। শুধুমাত্র মানবতা দেখিয়ে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জরুরি আলোচনা শুরু করতে হবে। তা না হলে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের জন্য সমূহ ক্ষতি করবে আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী গোষ্ঠী। সামগ্রিক অবস্থাকে আমাদের খুব সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দেশের মানুষ যেন কোনো উস্কানিতে পা না বাড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি তা হয়Ñ তা হবে আত্মঘাতী। এজন্য আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ও ভাতৃত্বের বন্ধনকে আমাদের অটুট রাখতে হবে। বিশ্বকে বোঝাতে হবে যে, আমরা সমঝোতায় বিশ্বাসীÑ সাম্প্রদায়িক হানাহানি, অরাজকতা ও নাশকতায় বিশ্বাসী নই। নতুন করে আগত ও পুরাতন রোহিঙ্গাকে হিসাবভূক্ত করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বহিরাগত সংগঠন যারা এখানে কাজ করছে তাদের উপরও নজরদারি রাখা আব্যশক।
বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা উত্তেজনা নেই। হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান সকলে মিলেমিশেই এই বাংলাদেশে বসবাস করছি। মিয়ানমারে কেন ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক আদর্শচ্যুতি ঘটল? তাদের কেন এই অধঃপতন হলো? কোথায় আজ গৌতম বুদ্ধ! হত্যার এই হলি খেলা প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ধমান্ধতাকেও আজ হার মানিয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমারের কাছে নতজানু হলে চলবে না। যে বুদ্ধ দেবের অহিংস নীতিকে আজ তারা পদদলিত করছে তাদের বিরুদ্ধে সকল বৌদ্ধ অনুসারীকে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূখর হতে হবে। তাদের উপর চাপ, শক্তি প্রয়োগ ও প্রতিষেধক ব্যবহার করতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। এই দুর্দিনে অবশ্যই সাহস, শক্তি ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিশ্বকে নিয়ে শক্তি ও অদম্য সাহস নিয়ে এই সংকটের মোকাবিলা করতে হবে।
লেখক: উপ-মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি একাডেমি (পিআরএল), সফিপুর, গাজীপুর
সম্পাদনা: আশিক রহমান