উজ্জ্বল বড়ুয়া : গেলো মাসব্যাপি কঠিন চীবর দানোৎসবের সময় এক কঠিন চীবর দানে যোগদান করি। চীবরদানের পূর্বাহ্নে আমন্ত্রিত অতিথিরদের সাথে আমারও ভোজনের সুযোগ হয়। খাবারের সময় সেই চীবর দানোৎসবের নির্ধারিত প্রধান অতিথি আহারের সাথে শূকরের মাংস খেতে খেতে বললেন, ‘জানেন, শূকরের মাংস খেতে ভয় লাগে। এই শূকরের মাংস খেয়েই বুদ্ধের আমাশয় হয়েছিল। সেদিন চুন্দের মাংস মুখে নিয়েই তথাগত বুঝতে পেরেছিলেন যে এগুলো পয়সন বা বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে, তাই অন্যান্য ভিক্ষুসংঘদের খেতে বারণ করেছিলেন সেদিন। ভাবলেন ক্ষতি হলে আমার হোক আমার শিষ্যদের যেন না হয়।
এত বড় তথ্যবিভ্রাট শুনে আমি বললাম, আপনার জানা তথ্যগুলো ভূল। একে তো সেদিনের প্রধান অতিথি তার উপর অনেকগুলো ডিগ্রিধারী ব্যক্তি তাই আমার কথাকে বলা যায় পাত্তাই দিলেন না।
বর্তমান সময়েও এমন অনেককেই দেখা যায় যারা উপরোল্লিখিত ব্যক্তির মতই পোষণ করেন বুদ্ধের শেষ আহার নিয়ে। তাই এই তথ্যবিভ্রাটটি দূর করতেই লিখতে বসা।
বুদ্ধ চুন্দের বাড়ীতে যে আহার গ্রহণ করেছিলেন তার নাম ‘শূকরমদ্দব’। যেহেতু খাদ্যটির নামে শূকর শব্দটি যুক্ত আছে তাই এটাকে শূকরের মাংস দ্বারা তৈরী খাদ্য বলে মনে করাই স্বাভাবিক। বাংলায় শূকর শব্দটি দ্বারা আমরা একটি প্রাণীকে বুঝি এটা সত্য। কিন্তু বুদ্ধের সময়ে বাংলার প্রচলন ছিল না, ‘শূকরমদ্দব’ শব্দটি পুরোটাই ছিল পালি। পালিতে শূকরকে বলা হয় বরাহ। আর তাই যারা নাম দিয়ে ‘শূকরমদ্দব’কে শূকরের মাংস দ্বারা তৈরী খাবার মনে করে তাদের ধারণা এখানে পুরোটাই ভুল প্রমাণিত হয়। কারণ ওই খাবারের নাম বরাহমদ্দব ছিল না।
মূলত : ‘শূকরমদ্দব’ হচ্ছে এক প্রকার রসায়ন বিশেষ। এটাকে বর্তমান সময়ের পাঁচনের সাথে তুলনা করা চলে। চুন্দ পূর্বেই শুনেছিলেন যে তথাগত বৈশাখী পূর্ণিমায় পরিনির্বাপিত হবেন এবং তৎপূর্বে তাঁর রক্তামাশয় রোগ হবে। তথাগতের যেন রক্তামাশয় রোগ না হয়, হলেও যেন অধিক কষ্টদায়ক না হয়, উপশমে কাজ করে তাই চুন্দ এই ‘শূকরমদ্দব’ প্রস্তুত করেছিলেন। বর্তমান সময়েও দেখা যায়, ডায়রিয়া-আমাশয় হলে অনেকে কাঁচা কলা রান্না করে খান। যাই হোক অনেকে মনে করেন নামের যুক্তিতে না হলেও ‘শূকরমদ্দব’ হচ্ছে বৃদ্ধ হয়নি এমন শূকরেরই কাটা মাংস যা ঔষধিযোগে তৈরী করা। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয় চুন্দ ছিলেন স্রোতাপন্ন আর্যশ্রাবক, সাধারণ লোকে প্রাণী হত্যা করে ভিক্ষুসংঘের জন্য খাদ্য তৈরী করতে পারে কিন্তু একজন স্রোতাপন্ন আর্যশ্রাবক জীবনান্তেও প্রাণী হত্যা করেন না কিংবা প্রাণীহত্যার নির্দেশ দেন না। তদুপরি কেউ প্রাণীহত্যা করে বুদ্ধকে দান দিলে বুদ্ধ তা গ্রহণ করতেন না।