মহাপজাপতি গোতমী বা মহাপ্রজাপতি গৌতমী বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে প্রথম নারী, যাকে বৌদ্ধ সংঘে ভিক্ষুণী হিসেবে জীবন যাপন করার অনুমতি প্রদান করা হয়। তিনি সম্পর্কে গৌতম বুদ্ধের বিমাতা ও মাসী ছিলেন।
মহাপজাপতি গোতমী কোলীয়গণের একজন রাজকন্যা ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল অঞ্জন এবং মাতার নাম ছিল যশোধরা। তিনি ও তাঁর ভগিনী মায়াদেবী উভয়ই তাঁদের খুড়তুতো ভ্রাতা ও শাক্য প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রধান শুদ্ধোধনকে বিবাহ করেন। সিদ্ধার্থ গৌতমকে জন্ম দিয়ে মায়াদেবী মৃত্যুবরণ করলে মহাপজাপতি গোতমী তাঁকে লালন পালন করেন। শুদ্ধোধনের ঔরসে তাঁর গর্ভে নন্দা ও নন্দ নামক দুই সন্তানের জন্ম হয়।
সিদ্ধার্থ গৗতম বুদ্ধত্ব লাভ করার কয়েক বছর পরে তাঁর পিতা শুদ্ধোধন মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মহাপজাপতি গোতমী সংসারধর্ম ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং গৌতম বুদ্ধের নিকট সংঘে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেন, কিন্তু বুদ্ধ কোনো নারীকে সংঘে যোগ করার ব্যাপারে প্রস্তুত ছিলেন না। হতাশ না হয়ে মহাপজাপতি গৌতমী মুন্ডিত মস্তক হয়ে পীতবর্ণের বস্ত্র পরিধান করে শাক্য ও কোলীয় প্রজাতন্ত্রের বহুসংখ্যক নারীকে একত্র করে বুদ্ধের অনুসরণ করে পদব্রজে বৈশালী যাত্রা করেন। বৈশালীতে পুনরারায় তিনি বুদ্ধের নিকট তাঁর আবেদন জানান। এই সময় বুদ্ধের অন্যতম প্রিয় শিষ্য ও সহায়ক আনন্দ মহাপজাপতির হয়ে বুদ্ধকে সংঘে নারীদের ভিক্ষুণী হিসেবে যোগদানের অনুরোধ করেন ও অবশেষে গৌতম বুদ্ধ এই প্রস্তাবে রাজী হন কিন্তু ভিক্ষুণীদের জন্য তিনি আটটি কঠিন নিয়ামাবলীর প্রচলন করেন।
ধম্মপদত্থকথা অনুসারে, গোতমীর উপসম্পদা আনুষ্ঠানিকভাবে না হওয়ায় পরবর্তীকালে ভিক্ষুণীরা তাঁর সঙ্গে উপোসথ করতে অরাজী হন, কিন্তু গৌতম বুদ্ধ স্বয় তাঁকে নিয়মনিষ্ঠ উপসম্পদাপ্রদান করেছিলেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের দ্বারা ধর্মশিক্ষা লাভ করে তিনি অর্হত হন। জীবনের বাকি সময় ভিক্ষুণী হিসেবে কাটানোর পর ১২০ বছর বযসে মহাপজাপতি গোতমী মৃত্যুবরণ করেন।