শুভ প্রবারণা পূর্ণিমাএবং বৌদ্ধ সমাজে তার গুরুত্ব
শ্রীমৎ বৌদ্ধ শ্রী ভিক্ষ ু: প্রবারণা পূর্ণিমা সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেও জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তিথি। বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধরাও প্রতিবছর আশি^নী পূর্ণিমায় এই তিথিকে যথাযথ ধর্মীয়ভাব গাম্বীর্যের মধ্যদিয়ে উদ্যাপন করে থাকে। মূলত আশি^নী পূর্ণিমাকেই বৌদ্ধরা প্রবারণা পূর্ণিমা হিসেবে উদ্যাপন করে থাকে।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক গৌতম বৌদ্ধ। বৌদ্ধত্ব লাভকরার আগে তার গৃহীনাম ছিল সিদ্ধার্থ। তিনি ছিলেন কপিলাবস্তুর রাজা শুদ্ধোধনের পুত্র। রাজকুমার সিদ্ধার্থ জন্ম, ব্যাধি, বার্ধক্য ও মৃত্যু এই চারিনিমিত্ত দর্শনকরার পর শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে সংসার ত্যাগ করার ব্রত স্থির করেন। তার নবজাতক পুত্র রাহুল কিংবা প্রিয়তমা স্ত্রী যশোধ রাজা গতিক কোনো মায়ার বন্ধন ইসিদ্ধার্থের গৃহত্যাগের সংকল্প কেহার মানাতে পারে নি। সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ করার সময় অগণিত দেব ব্রহ্মা এই দুর্লভ সংকল্প ও ত্যাগের মাহাত্ম অবলোকন করেছিলেন।
আকাশে বাতাসে বিজয়ের সুরধ্বনি হয়েছিল। অথচ পৃথিবীর কোনো মানুষ তাঁর এই সংসার ত্যাগ বামহাভি নিষ্ক্রমণের কথা বুঝতেই পারে নি। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় সংসার ত্যাগ করার সময় দেবতা ব্রহ্মা দেরমহানুভবে তিনি বহুদূর চলে যেতে সক্ষম হন। অবশেষে ভোরবেলায় পৌঁছলেন একটি নদীর তীরে। তিনি তাঁর সারথি ছন্দককে জিজ্ঞাসা করলেন, এই নদীর নাম কি? ছন্দক উত্তর দিলেন- এই নদীর নাম অনোমা নদী। বোধিসত্ত্ব সিদ্ধার্থ অনোমা নদী কেনিমিত্ত রূপে দর্শন করে ভাবলেন ইহাই মঙ্গল জনক, সংসার ত্যাগ করার জন্য উপযুক্ত স্থান। কঠোর সংকল্পে স্থির সিদ্ধার্থ শরীরের সব আভরণ খুলে ফেললেন এবং তাঁর ক্ষুতলোয়ার দিয়ে বাম হাতে তাঁর চুল ধরে ডান হাত দিয়ে তা ছেদন করে অধিষ্ঠান করলেন-‘আমার এই কর্তিত চুল আমি আকাশে নিক্ষেপ করে দেব, আমি যদি জন্ম-জন্মান্তর দশ পারমী, দশ উপ-পারমী, দশ পরমার্থ পারমী পূরণ করে, এই জন্মে বৌদ্ধত্ত্ব লাভ করতে পারি, তাহলে আমার চুল আকাশে নিক্ষেপ করার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকুক, মাটিতে আর পতিতনা হোক’। এই অধিষ্ঠান করে তিনি কর্তিত চুল আকাশে নিক্ষেপ করে দিলেন। বোধিসত্ত্বের মনের কথা জানতেন দেবরাজ ইন্দ্র। তিনি একটা স্বর্ণের ঝুড়িতে করে গৃহত্যাগী সিদ্ধার্থের কর্তিত চুল নিয়ে গেলেন তাবতিংস স্বর্গে। তিনি সেই চুল কেনিয়ে-তাবতিংস স্বর্গে একটি জাদী তৈরি করলেন। সিদ্ধার্থের বৌদ্ধত্ব লাভের আগে এই জাদী নির্মিত হয়, এই জাদীর নাম হলো চুলামনি-জাদীবা চৈত্য। চুলামনি জাদী এখনো স্বর্গে দেব-ব্রহ্মাগণ কর্তৃক এবং মনুষ্য লোকে ফানুশ উড়িয়ে মনুষ্য দ্বারা পূজিত হচ্ছে। তাই বৌদ্ধের চুল কর্তনের পবিত্র স্মৃতিকে স্মরণ করে বৌদ্ধরা প্রবারণা পূর্ণিমার সময় ফানুশ উড়িয়ে থাকে। বৌধিসত্ত্বের সংসার ত্যাগের সময় অনোমা নদীর তীরে ব্রহ্মা সিদ্ধার্থকে দান করেছিলেন অষ্ট পরিস্কার বা অষ্ট পুরষ্কার এবং শ্রদ্ধাচিত্তে বোধিসত্ত্ব সিদ্ধার্থের ব্যবহার্য কাপড়গুলো গ্রহণ করে ব্রহ্ম লোকে তৈরী করেছিলেন দুস্সা পরিভোগ জাদী। ইহাই গৌতম বৌদ্ধের শাসনামলের সর্ব প্রথম পরিভোগ জাদী। সিদ্ধার্থ গৌতমের বৌদ্ধত্ব প্রাপ্তির ছয় বছর পূর্বে ব্রহ্ম লোকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ব্রহ্মা গণের দ্বারা পূজা প্রাপ্ত হয়ে আজও দেব-মনুষ্য দ্বারা পূজিত হচ্ছে এই পরিভোগ জাদীবা চৈত্য।
স্বর্গের দেবতারা দেবরাজ ইন্দ্র কর্তৃক স্থাপিত চুলামনি-জাদীকে এখনো পূজা করেন বিধায় আমরাও প্রবারণা পূর্ণিমার সময় ফানুশ উড়িয়ে তার পূজা করি। ফানুশ উড়ানোর মাধ্যমে ঐ চুলামনি-জাদীর পূজা করা হয়। আমরা বৌদ্ধ বন্দনা করতে প্রদীপ পূজা করতে পারি খুব সহজেই কিন্তু স্বর্গের চুলামনি-জাদীর উদ্দেশ্যে ফানুশ উড়িয়ে আকাশে পূজা করি। তাই সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শুভ আষাঢ়ী পূর্নিমা থেকে তিন মাস শীল, সমাধি, প্রজ্ঞার অনুশীলনের পর আশি^নী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা দিবসে তাবতিংস স্বর্গের চুলামনি-জাদীবা চৈত্য এবং ব্রহ্ম লোকের দুস্সা পরিভোগ জাদীবা চৈত্যকে ফানুশ প্রদীপ উত্তোলনের মাধ্যমে পূজা করে ব্রহ্মা, দেব-[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশমনুষ্যসহ সকলের সুখ-শান্তি মঙ্গল কামনা করে। আসুন প্রবারণা পূর্ণিমায় সকলের সুখ-শান্তি এবং মঙ্গল কামনা করি।জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।