গোলাম মর্তুজা
রোহিঙ্গা সংকটটা বাংলাদেশ তৈরি করেনি কিন্তু বাংলাদেশ ভুক্তভোগী। মিয়ানমার যেহেতু এই সমস্যা সমাধান করতে চায় না, সে কারণে মিয়ানমার সব সময় চেষ্টা করেছে এটাকে দ্বি-পাক্ষিক রাখতে। ১৯৭৭ সাল থেকে শুরু হওয়ার পরে এবারের ২৫ আগস্টের ঘটনা পর্যন্ত মিয়ানমার এটাকে দ্বি-পাক্ষিক রাখতেই সচেষ্ট ছিল। এবার যেহেতু মিয়ানমার গণহত্যাটা একটু বেশিই চালিয়েছে, সে কারণে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে যে, মিয়ানমার কী ধরনের বর্বরতা চালিয়েছে। জাতিসংঘসহ সারাবিশ্ব একধরনের জাগ্রত হয়েছে। জাতিসংঘে বারবার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা থেকে এটা এখন আর্ন্তজাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এ জায়গায় তিনটি দেশ খুব গুরুত্বপূর্ণÑ রাশিয়া, চীন এবং ভারত। চীন এবং রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বলিষ্ঠ সদস্য কারণ, তাদের ভেটো দেওয়ার ‘পাওয়ার’ আছে। ভারতের যদিও ভেটো পাওয়ার নেই। কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ভারতের একধরনের প্রভাব আছে। মিয়ানমারের রাজনীতিতে ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ রয়েছে। এ কারণে তারা মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। তারা মিয়ানমারের পক্ষ নেওয়ার কারণে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনের আলোচনাটা দ্বি-পাক্ষিকে নিয়ে আসতে চায় মিয়ানমার। ভারত এবং রাশিয়া বাংলাদেশকে চাপ দিয়েছে যে, তোমরা এই ইস্যুকে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে না নিয়ে গিয়ে দ্বি-পাক্ষিকভাবে সমাধান করো। বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে চাপে পড়ে। এর ফলে এই সমস্যা সমাধানের একটা বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। কারণ, দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করে এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এটা খুব পরিষ্কার। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার যে নীতি তাতে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করে এর সমাধান করার সুযোগ বাংলাদেশের হাতে নেই। এই সমস্যাটা একমাত্র সমাধান হতে পারত যদি জাতিসংঘ একটা কার্যকর পদক্ষেপ নিত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ যদি তা সর্মথন করত। চীন, ভারত, রাশিয়া যদি মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান না নিত তাহলেও অনেক সহজ হতো। বাংলাদেশ যদি দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় না বসত, তাহলে এই চাপে বাধ্য হয়ে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হতো। জাতিসংঘের চাপ সহ বিশ্বের অন্যান্য চাপ যখন মিয়ানমারের ওপর থেকে কমে যাবে, তখন এই আলোচনাটাকে একেবারেই গুরুত্ব দেবে না মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে, এখানেই থেকে যাবে। বাংলাদেশ এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে বলে মনে হয় না। এবং এটা বাংলাদেশের স্থায়ী সমস্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
পরিচিতি: সম্পাদক, সাপ্তাহিক
মতামতগ্রহণ: সানিম আহমেদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ