সাক্ষাতকারে সালেহউদ্দিন আহমেদ মোবাইলে টাকা ট্রান্সফার ব্যাংকিং এর বিকল্প নয়
জাফর আহমদ : মোবাইলে টাকা ট্রান্সফার ব্যাংকিং এর বিকল্প নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, অনলাইনে, ফোনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ছাড় করবেন, এগুলো ভাল নয়। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ভাল না- যে আপনি টাকা পাঠাবেন। দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিরূপন ও সরকারের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সোনালী ব্যাংক সরকারের ট্রেজারি ব্যাংক হিসাবে কাজ করছে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে সরকারের ট্রেজারি ব্যাংক হিসাবে কাজ করছে। অন্য ব্যাংকগুলোতে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া, ভর্তুকি দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ হয়ে থাকে। ব্যাংক হলো মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য, ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য। কিন্তু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দুর্নীতি ইত্যাদির কারণে তা হচ্ছে না। দুর্নীতিবাজের শাস্তি হচ্ছে না, ভুলের শাস্তি হচ্ছে না, চাকুরি সহজে যায় না। আমি মনে করি, এতগুলো রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক রাখার প্রয়োজন নেই। ট্রেজারি ফাংসন করে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, উন্নয়ন ব্যয় করে, পাবলিক মানি ছাড়ের কাজ করে এগুলো রেখে বাকি ব্যাংকগুলি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।
পুরনো ঋণগুলোতে খেলাপি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ঢালাওভাবে রিসিডিউল করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বলা হলো রিসিডিউল করতে। দুইবার, ৩ বার, ৪ বার রিসিডিউল করলো। আমার সময়ে ৩ বারের বেশী দেইনি। এর ফলে যার ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা ছিল সেও রিসিউল করলো। ৫০০ কোটি টাকার উপরে রিস্ট্রাকচার করে দেওয়া হলো। সব মিলে ব্যাংকিং খাতে একটি ম্যাসাকার অবস্থা।
খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে ‘ন্যারো’ ব্যাংকিং করার পরামর্শ দেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিতে হবে, যে পরিমান ডিফল্ট লোন রিকভার করবে সমপরিমান ঋণ বিতরন করবে। ব্যাংকগুলো যে টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করছে, তা রিস্কি ব্যবসাতে বিনিয়োগ করছে। আবার ডিফল্টার হচ্ছে। সরকার এই টাকা পুনঃঅর্থায়ন করছে। সরকার এই বাজেটেও এবার ১২৪ হাজার কোটি টাকা দিলো। মানুষের টাকায় এই পুনঃঅর্থায়ন ঠিক হচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রিয় ব্যাংক এখন যেসব নীতি গ্রহণ করছে তা মোটেই নতুন উদ্যোক্তা, ভাল উদ্যোক্তা ও সৎ উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক না। একজন সৎ উদ্যোক্তা সুদ ও কিস্তি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা কোন প্রণোদনা পাচ্ছে না। একজন সৎ ব্যবসায়ীর ওয়ার্কিং ক্যাপিটালে শর্টফল হলে ব্যাংক তার কাছে থেকে সড়ে পড়ে। তিনি বলেন, ব্যাংকের দায়িত্ব উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা, ছোটকে উপরে তোলা। ব্যাংক চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে অপেক্ষা করে কখন উদ্যোক্তা আসবে।
পক্ষান্তরে তথাকথিত জামানত দেখাবে, টাকা নিয়ে যাবে। তারপর টাকা মেরে দেবে। টাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্যাংকারদের মনোভাব সেই কনভেনশনাল। যুযোপযোগি হয়নি। ব্যবসায়ীবান্ধব হতে হবে। যেটা হয়েছে তা বিশেষ ধরনের ব্যবসায়ী বান্ধব। সকলের জন্য নয়। তাদের মনোভাব চেঞ্জ করতে হবে। ভাল ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে হবে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন