ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল করার পরিকল্পনা হচ্ছে
রিকু আমির : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চায় সরকার। পৃথক পাঁচ ভবনে মোট পাঁচ হাজার শয্যাসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের কাজ চলছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন রোববার সকালে এ প্রতিবেদককে জানান, গ্রহণ করা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড়। তবে পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় হাসপাতাল তাইওয়ানের গুইশান জেলার ফাক্সিং স্টেটে অবস্থিত। এর নাম চাং গাং মেমোরিয়াল হাসপাতাল। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে তিন হাজার ৭০০ শয্যা আছে। যদিও ১০ হাজার শয্যা বসানোর সক্ষমতা আছে হাসপাতালটির। এখানে এক হাজার ৭০০ চিকিৎসকের বিপরীতে পাঁচ হাজার ৩০০ নার্স আছে। হাসপাতালটির অন্তঃবিভাগে বছরে ১১ লাখ রোগী ও বহির্বিভাগ থেকে ৩৫ লাখ রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে।
অন্যদিকে, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান শয্যা সংখ্যা ২ হাজার ৬০০। কিন্তু প্রতিদিন ভর্তি থাকে (মেঝেসহ) সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি রোগী। বছরে ৮ লাখেরও বেশি রোগী বহির্বিভাগ থেকে, প্রায় ৪ লাখ রোগী জরুরি বিভাগ থেকে, দেড় লাখেরও বেশি রোগী অন্তঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্রতি বছর সেবা গ্রহিতার সংখ্যা বেড়ে চলছে।
ঢাকা মেডিকেল সূত্র জানায়, ১৭ তলা বিশিষ্ট পৃথক পাঁচটি ভবনের প্রতিটিতে এক হাজার শয্যা (মোট ৫ হাজার) রাখার পরিকল্পনা আছে। পাঁচটি ভবনে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হবে, যাতে কোনো সেবার জন্য এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যেতে না হয় রোগীকে। প্রতিটি ভবনই হবেÑ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের মতন। এছাড়া কলেজ ভবন সংস্কার করে বহুতল ভবন নির্মাণ, নতুন করে গবেষণা ভবন, জরুরি বিভাগের জন্য পৃথক ভবন নির্মাণসহ আরও কিছু ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও আছে।
সূত্র জানায়, ১৯৪৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত যেসব ভবন থেকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে, সেসব ভবনের জমিতেই নির্মাণ করা হবে ওই পাঁচ ভবনসহ আরও বেশকিছু ভবন। তবে কীভাবে বর্তমানের সেবা অব্যাহত রেখে সেসব কাজ করা যায়, সে বিষয়েই ভাবছে সরকার। স্থাপত্য অধিদফতর সেই অনুযায়ীই পরিকল্পনা দেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে।
আরও বেশকিছু নতুন পরিকল্পনার কথাও জানা যায় হাসপাতালটি থেকে। সূত্র জানায়, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মতো ইলেকট্রো মেডিকেল সেন্টার, মেডিকেল ইকোনমিক বিভাগ, অত্যাধুনিক পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনা, অত্যাধুনিক লন্ড্রি, জীবাণুমুক্তকরণে চিকিৎসকদের পোশাক-আশাক জীবাণুমুক্তকরণে খুবই উন্নতমানের মেশিন স্থাপন, উন্নত প্রক্রিয়ায় রোগীর পথ্য প্রস্তুত, হাসপাতালের অভ্যন্তরে অত্যাধুনিক ট্রাফিকিং ব্যবস্থা করা হবে। এসবের বেশিরভাগই বাস্তবায়নে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালকে অনুসরণ করা হবে।
সরকার আরও চাচ্ছেÑ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিশ্বের সর্বাধুনিক-মানসম্পন্ন হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশপাশি বিশ্বের বুকে সবচেয়ে কম পয়সায় সর্বাধুনিক চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। একইসঙ্গে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শতভাগ বর্জ্যমুক্ত প্রতিষ্ঠান, পরিবেশবান্ধব সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও সৌর শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা মেডিকেলকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। পরিবেশবান্ধব করতে সংস্কার করা ঢাকা মেডিকেলের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ জমিতে ফুল-ফল-কাঠ গাছের সমন্বয়ে সবুজ রাখার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।