একাত্তরের মার্চে পৈশাচিক নির্যাতন
কল্লোল মন্ডল
এই তথ্যগুলো আমাদের মত নতুন প্রজন্মদের জানা বিশেষ জরুরী। স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালী মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অষ্ট্রেলিয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গনধর্ষনের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক এক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন এই বলে- যে তারা কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ করেছিলো। তাদের সরল জবাব ছিলো। আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিলো, যে একজন ভালো মুসলমান কখনোই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে।আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে। তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানী। আজ কেন যেন মনে হয় টিক্কা খান এবং নিয়াজীরা একাত্তরে হেরে গেলেও আসলে জিতে গেছে। আজ রাস্তা-ঘাটে পাকিস্তানীদের অসংখ্য সমর্থক পাওয়া যায়, যারা চিৎকার করে স্লোগান তোলে ম্যারি মি আফ্রিদি, অনলাইনে পুরান ঘটনা ভুলে গিয়ে পাকিস্তানীদের শীতল ঘৃণার পরিবর্তে উষ্ণ ভালোবাসা দেবার পরামর্শ দেন কিছু আধুনিক তরুণ, অযুতনিযুত শহীদের শবের উপর দাঁড়িয়ে। তাদের দৃষ্টিতে ইকবালের কাছে রবীন্দ্রনাথ কিছুই না, পাকিস্তানী জাল ব্যান্ডের গানের কাছে সোনার বাংলা ক্ষ্যাতফসল, ইসলামাবাদ বা করাচীর সৌন্দর্যের কাছে বান্দরবান বা রাঙ্গামাটি বোগাস, লাহোর বা করাচীর কামিজ পড়া একজন সাদা চামড়ার মেয়ের তুলনায় বাঙ্গালী নারীরা এসব তরুণদের কাছে নিতান্তই নীরস। মনেপ্রাণে পাকিস্তানী এসব তরুণেরা কি জানে একাত্তরের মার্চে মিরপুরের সেই বীভৎসতার কথা বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে এনেছিল পাকিস্তানীরা, কাপড় খুলতে বলেছিল সবাইকে? রাজি না হওয়ায় বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলে কে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।