ত্রাণ পেতে রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক হচ্ছে
নাফরুল হাসান : মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিবন্ধনে যুক্ত করতে এবার ত্রাণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নিবন্ধন কার্ড দেখিয়েই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত টেকনাফ এবং উখিয়ার ১২টি পয়েন্ট থেকে তাদের ত্রাণ সংগ্রহ করতে হবে। উখিয়াতে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সফল না হলেও ইতোমধ্যে টেকনাফে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নতুনভাবে বাংলাদেশে এসেছে বলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাগুলো জানালেও প্রকৃত সংখ্যা কত তা কেউ জানে না। এ অবস্থায় প্রকৃত সংখ্যা জানার জন্য সরকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করলেও এ ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিরুৎসাহ ভাব দেখা যাচ্ছে। নিবন্ধনের আওতায় আনা না গেলে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকটা কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ সম্পর্কে কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং আশ্রয় শিবির ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ রোহিঙ্গা আছে তার কোনো সংখ্যা কারোই জানা নেই। এদের মধ্যে কারা ত্রাণ পাচ্ছে সেই হিসাবও রাখা যাচ্ছে না। এখন নিবন্ধন কার্ড দেখিয়ে ত্রাণ নিয়ে একটা শৃঙ্খলা আসবে।’ রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতেই নিবন্ধনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ অবস্থায় তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। এ সম্পর্কে উখিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেন, ‘তাদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি সহজ হবে।’
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনী যুক্ত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের একটি করে টোকেন দেওয়া হতো। দ্বিতীয় পর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের ছবিযুক্ত রেশন কার্ড করা হয়। তবে এখন টেকনাফের ৬টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে রেশন কার্ডের পাশাপাশি নিবন্ধন কার্ডকেও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ।
এ সম্পর্কে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ক্যাপ্টেন তানজুম বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণের জন্য যে কার্ড দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোতে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে আলাদাভাবে রেশন কার্ড বিতরণ করা হবে।’
এদিকে রোহিঙ্গারা বলছেন, ‘এই কার্ডের পর তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যই পাচ্ছেন ত্রাণ সহায়তা হিসেবে।’
রোহিঙ্গারা যাতে দ্রুত নিবন্ধন কার্ড পায়, সেজন্য ৭০টি বুথে পাসপোর্ট অধিদফতর রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর। এ সম্পর্কে পাসপোর্ট অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সালমান তারিক বলেন, ‘৬টি ক্যাম্পে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। সরকার আরও ক্যাম্প বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’
এদিকে গত দেড় মাসে উখিয়ার ৪টি এবং টেকনাফের দুটি কেন্দ্র থেকে মোট ২ লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। আর প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১২টি পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছে সেনাবাহিনী। সূত্র : সময় টিভি, সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ