চন্দন রিমু : বছর ঘুরে আবারও ফিরে এসেছে কঠিন চীবর দান। প্রত্যেক বছর বাংলাদেশ সহ সমস্ত থেরবাদী দেশসমূহে এ দানোৎসব সাড়ম্বড়ে উদযাপিত হয়। আশ্বিনী পূর্ণিমার পর দিন হত কার্তিকী পূর্নিমা পর্যন্ত একমাস ব্যাপী এ দানক্রিয়া উদযাপনের সময়। অন্যান্য দানের সাথে এর পার্থক্য হলো এই যে, এ দানক্রিয়া একই বিহারে বছরে একবার মাত্র করা যায়। বছরের অন্যান্য সময় এটা করা যায় না। যে বিহারে কোন ভিক্ষু বর্ষাবাস অধিষ্ঠান করেনি সে বিহারে কঠিন চীবর দান উদযাপিত হতে পারে না।
ভিক্ষুগণ একসঙ্গে ৩টি মাত্র চীবর ব্যবহার করতে পারেন। এ তিনটি চীবরকে একত্রে ত্রিচীবর বলা হয়। ত্রিচীরব হল
১. উত্তরাসঙ্গ বা বহির্বাস (উরনি)
২. সংঘাতি বা দোয়াজিক এবং
৩. অন্তর্বাস বা পরিধেয় (পিনোনি) বস্ত্র।
এ তিনটি চীবরের মধ্যে যে কোন একটি দ্বারা কঠিন চীবর দান করতে হয়। একই বিহারে প্রথম বর্ষাবাসকারী ভিক্ষুগণই কেবল কঠিন চীবর দান গ্রহণ করতে পারেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় পরদিন হতে প্রথম বর্ষাবাস আরম্ভ করতে হয়।
যেদিন কঠিন চীবর দান কর হয় সেদিন অরুণোদয় হতে পর দিবসের অস্তগমন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কাপড়বুনা, কাপড় কাটা, সেলাই, রঙ করা প্রভৃতি সমস্ত কার্যাদি একই দিনে সম্পন্ন করতে হয়। এতদ্ব্যতীত বাজার হতে তৈরি চীবর (রেডিমেট) ক্রয় করেও কঠিন চীবর দান করা যায়। চীবর তৈরি করে কমপক্ষে পাঁচজন ভিক্ষুর সম্মুখে নিম্ন লিখিত মন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে কঠিন চীবর দান করতে হয় : ‘ ইমং কঠিন চীবরং ভিক্খুসংঘস্স দানং দেমা কঠিনং অত্থরিতুং।’ ভিক্ষুসংঘ আবার সেই চীবর বিনয় নিয়মানুসারে সীমায় (ঘ্যাংঘর) গিয়ে ‘কঠিনোত্থার কম্মবাচা’পাঠের দ্বারা বিহারস্থ উপযুক্ত ভিক্ষুকে প্রদান করেন। বিহারস্থ অন্যান্য ভিক্ষুগণ অনুমোদন করে কঠিন চীবরের পঞ্চফল লাভ করেন। বিহারস্থ ভিক্ষুগণ চীবর অনুমোদন করার পরে আগন্তুক ভিক্ষুগণ কঠিন চীবর অনুমোদন করতে পারেন। বর্ষাবাস ব্রত ভঙ্গকারী ভিক্ষু কোনো ক্ষেত্রে কঠিন চীবর দানের পঞ্চফল লাভ করতে পারেন না।