উপল বড়ুয়া : বুদ্ধের জীবদ্দশায় কালজয়ী যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগ পূর্ণিমা কেন্দ্রিক। বাংলা বার মাসে বারটি পূর্ণিমা দেখা যায়। চৈত্র পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, শ্রাবণী পূর্ণিমা, ভাদ্র পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা, কার্তিকী পূর্ণিমা, পৌষ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, ফাল্গুনী পূর্ণিমা, জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা, অগ্রাহায়ণ পূর্ণিমা।
তিনমাস বর্ষাবাসের পরে বৌদ্ধদের ধর্মীয় জীবনে শুরু হয় কঠিন চীবর দানোৎসব। বর্ষাবাসের সময় ভিক্ষুরা যে বিহার বা কিয়াংয়ে অবস্থান করেন মূলত সেইখানেই কঠিন চীবর দান করতে হয়। আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথি থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা এই তিনমাস বর্ষাবাসের সময়। এরপরে আরম্ভ হয় কার্তিক পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বৈশাখী পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা বা মাঘী পূর্ণিমার যে গুরুত্ব, কার্তিক পূর্ণিমা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে বিহারে বিহারে ভিক্ষুসংঘ ও উপাসক-উপাসিকারা বুদ্ধকে শরণ করার মধ্য দিয়ে কার্তিক পূর্ণিমা পালিত হয়ে থাকে। বুদ্ধ পুজা ও উপোসথ রাখার মধ্য দিয়ে মৈত্রীময় চেতনায় পালিত হয় কার্তিক পূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধ নিজেই বলেছেন, ‘সকল দিনই পবিত্র।’ প্রতিটি পূর্ণিমায় বুদ্ধ জীবনের সাথে রয়েছে গুঢ় যোগাযোগ। কার্তিক পূর্ণিমা মূলত বাংলা ঋতুচক্রের শীতকালের ঈঙ্গিত আনে। সনাতনী বাঙালিরা এই পূর্ণিমা বেশ গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। তবে এসব পুজা-পার্বণ ধীরে ধীরে কমে আসছে গ্রামে। শহরে তেমন আচার-কৃষ্টি না থাকলেও শহরের হাওয়া বা কর্পোরেট পুঁজি কিংবা পণ্য সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গ্রামের পুজা-পার্বণের বিশ্বাসে ধাক্কা দিয়েছে।
বাঙালি উৎসবপ্রবণ জাতি। বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের লেখায়ও বারবার ফিরে ফিরে এসেছে কার্তিক ঋতুর মাহাত্ম। জীবনানন্দ দাশ তার আবার আসিব ফিরে কবিতায় লিখেছেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে,/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’ উকিল মুন্সী কার্তিক মাকে নাইওর যেতে চেয়েছিলেন। গেয়েছেন, কতো লোকে যায়রে নায়র এই না আষাঢ় মাসে/ উকিলই হবে নায়র কার্তিক মাসের শেষে। কিয়াংয়ে বা বিহারে ভান্তেগণ কার্তিক পূর্ণিমাতে এই পূর্ণিমার ধর্মীয় মাহাত্ম নিয়ে দেশনা করেন উপাসকদের প্রতি। উপাসকরা বেশ শান্ত হয়ে শুনেন এই ধর্মীয় উপদেশ।