অর্থনীতিবিদদের অভিমত ডুইং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবনমনে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে
আরিফুর রহমান তুহিন : বিশ্বব্যাংক গত সপ্তাহে বৈশ্বিক ডুইং বিজনেস বা ব্যবসা করার সূচক-২০১৮ প্রকাশ করেছে। ১১টি বিষয় নিয়ে প্রকাশিত সূচকে বলা হয়েছে, ১৯০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ব্যবসা করার সূচকে ১ ধাপ পিছিয়ে ১৭০ এ পৌছেছে। অথচ প্রতিবেশি দেশ ভারত ৩০ ধাপ এগিয়ে ১০০ তে উঠে এসেছে। এতে দেশে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল বলেও মনে করেন তারা। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, অবকাঠমো অনুন্নয়ন, জ্বালানী সল্পতা, রাজনৈতিক সমস্যা, অদক্ষ শ্রমিক ও দূর্নীতি, করসংক্রান্ত সমস্যার কারণে এবছর বাংলাদেশের সূচক কমেছে। অথচ মাস খানেক আগেও বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, তারা সিঙ্গেল ডিজিটের সূচকে যাওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। এলক্ষ্যে সরকার বিগত বাজেটেগুলোতে এডিপিতে অবকাঠামো খাত এবং বিদ্যুতের জন্য বড় ধরণের বাজেট রেখেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ডুইং বিজনেসের যে ১১টি বিষয় নিয়ে সূচক তৈরি করা হয়েছে, উক্ত সমস্যাগুলো অনেকদিন থেকে চলে আসছে। এটা হতাশাজনক। বিশ্বব্যাংকের এই রিপোর্ট খারাপ সংকেত দিচ্ছে। এমনিতেই কয়েক বছর যাবত প্রাইভেট ও বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। জিডিপিতে এর অবস্থান খুবই কম। এই অবস্থা চলতে থাকলে এসডিজিতে বিরাট প্রভাব পড়বে। ফলে মুখ থুবড়ে পরতে পারে সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের সুযোগ বৃদ্ধি। আমরা সেটা না করে তাদের ওপর করের বোঝা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি। ফলে টেলিকম খাতেরই প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগকারী ৪টি প্রতিষ্ঠানকে স্টক মার্কেটে প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। এমনি অনেক কোম্পানি এই সমস্যার কারণে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ভারত, আমেরিকার মত দেশ যখন করের হার প্রায় অর্ধেক কমিয়েছে, তখন আমরা উল্টো পথে হাটছি। আসলে আমদের পলিসিতে সমস্যা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, যখন সরকার করের পরিমাণ কমাবে তখন ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়া সুযোগ পাবে। এতে বিনিয়োগও বাড়বে আবার সরকারের আয়ও বাড়বে। এছাড়া আরেকটি সমস্যা আদালতে একটি মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকে। সরাকারের উচিৎ ব্যবসায়ীক মামলার জন্য আলাদা বেঞ্চ গঠন করা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী মনে করেন, বিশ্বব্যাংক যে ১১ টি বিষয়ের উপর সূচক করেছে তার অনেকগুলো প্রক্রিয়াধীণ। এগুলো সম্পন্ন হলে এই সূচক অনেক এগোবে। সরকার দেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করার জন্য ১০০ টি অর্থনৈতিক জোন করছে। যারা নতুন বিনিয়োগ করবে তারা অবশ্যই এই জোনসমূহেই বিনিয়োগ করবে। ইতিমধ্যে দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন