শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ আজো অর্জন হয়নি
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
শহীদ নূর হোসেন দিবসের তাৎপর্য বা মূলমন্ত্র একটাই- গণতন্ত্র। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ১৯৮৭ সালের এই দিনে পুলিশের নির্মম বুলেটের আঘাতে নূর হোসেনের বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। নূর হোসেন নতুন প্রজন্মের মাঝে গণতন্ত্রের চেতনা জাগ্রত করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কঠিন লড়াইয়ের দীর্ঘ পথে এ পর্যন্ত যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের মাঝে নূর হোসেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলাদেশটা উজ্জীবিত হয়েছিল গণতন্ত্রের নামে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় চেতনাই ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং সংবিধানের চারটি রাষ্ট্রিয় মূল নীতির প্রথমটি ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি বাংলাদেশে। শুরুটা ছিল ভালো, তারপর ক্রমাগত সংকট দেখা গেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ সম্পূর্ণই উল্টো পথে চলে গেল।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত লাগাতার সামরিক এবং ছদ্মবেশি সামরিক শাসন চলেছে। কাজেই গণতন্ত্র তখন ছিল না। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যে গণ-আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তারই অংশ ছিল শহীদ নূর হোসেন। তার বুকে পিঠে লেখা ছিল- ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ তাকে হত্যা করেছিল পুলিশ। কিন্তু শহীদ নূর হোসেনের যে কারণে আত্মত্যাগ, সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে আজও সম্পূর্ণ হয়নি। অবশ্য এটা মেনে নিতে হবে, গণতন্ত্র হচ্ছে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার নাম এবং সেই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে একসময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে এখনো অনেক সমস্যা আছে গণতন্ত্রের পথে। কাজেই পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ বলা যাবে না বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ গণতন্ত্রায়নের দেশ, গণতান্ত্রিক দেশ নয়।
পরিচিতি : ইতিহাসবিদ
মতামত গ্রহণ : লিয়ন মীর
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন