প্রসঙ্গ : বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
মো. সাজ্জাদ হোসেন : প্রিলিমিনারী ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পদশূন্য রেখে মৌখিক পরীক্ষায় একজন প্রার্থীকে বাদ দেওয়া ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, এটা পাগলেও জানে মৌখিক পরীক্ষা কোনোভাবেই মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মানদন্ড হতে পারে না। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ৩০ শতাংশ কোটা সামান্যই মানা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। উপরন্তু প্রজ্ঞাপন বাতিল করে এই কোটায় অমুক্তিযোদ্ধা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ। ওই আমলে অনুষ্ঠিত ২৪তম, ২৫তম, ২৬তম এবং বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক আমলের ২৭তম বিসিএস এ মৌখিক পরীক্ষায় বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অনেক সদস্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সনদ ছুঁড়ে ফেলে দেওয়াসহ অনেক কটুক্তি করেছে এবং মৌখিক পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃত ফেল করিয়ে তাদের চাকরি বঞ্চিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বর্তমানে পিএসসির বিশেষ বিশেষ সদস্যের বিরুদ্ধেও এরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ শোনা যায়। অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিসিএস গুলোতেও শত শত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চাকুরি বঞ্চিত হয়েছে। অপরদিকে পিএসসির ভাষ্য, মুক্তিযোদ্ধার কোটায় সিট ফাঁকা রয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা চাকরি পায় না কেন? এই পরীক্ষার পর তাদের আর কি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে? মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক থাকলেও পিএসসির চেয়ারম্যান ও কতিপয় সদস্যের কোটা বিরোধী অবস্থান ও ষড়যন্ত্রে এই কয়েক বছরে ৩০ শতাংশ কোটায় সামান্য সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাই চাকরি পেয়েছে বলে দাবি স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের। পাশাপাশি, কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ভবঘুরের মতো জীবনযাপন করছে। এই মুহূর্তে বিসিএস ঘোষণা করা হলেও শুধুমাত্র বয়সের কারণে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আবেদনই করতে পারবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি-পিএসসির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কোটা বিরোধী এই চক্রটি চাচ্ছে প্রশাসনের মূল যে চালিকা শক্তি অর্থাৎ ‘সাধারণ ক্যাডারের (পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস্, কর, নিরীক্ষ ইত্যাদি)’ পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘টেকনিক্যাল ক্যাডারে (ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষক ইত্যাদি)’ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়োগ দিতে, যাতে মূল প্রশাসন কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠিত হতে না পারে। তাদের এই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য শুধু টেকনিক্যাল ক্যাডারে ঘোষিত ৩২তম স্পেশাল বিসিএস। পিএসসির এই সিদ্ধান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চরম অপমান ও অবমাননাকর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের আরেকবার কলা ঝুঁলিয়ে মুলা খাওয়ানোর চক্রান্ত হয়েছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে সরকার ওই বিসিএস ঘোষণা করে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। এ ধরনের হোমিওপ্যাথিক মার্কা টেকনিক্যাল ক্যাডার দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় যুগ যুগ ধরে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে বয়সসীমা ৩৫ বছর করে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ স্পেশাল বিসিএস ঘোষণা করা উচিত। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কারো দয়ার বিষয় নয় বরং এটি মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক অধিকার। মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানরা কখনোই মেধার বিপক্ষে নয়। এ ক্ষেত্রে জেলা কোটাসহ অন্যান্য কিছু কোটা বাতিল বা সমন্বয় করে কোটা সংস্কার করা যায়। আমার জানামতে, কোনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানই আজীবন এই কোটা চান না। দীর্ঘদিন কোটা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সাথে কুটচালাকি হয়েছে। তাই তারা এই মুহূর্তে এই কোটায় হাত দেওয়ার সম্পূর্ণ বিপক্ষে। তবে সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই এই কোটা পর্যায়ক্রমে সংস্কারে তাদেরও কোনো বিরোধীতা থাকার কথা নয়। বিসিএস বা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভাইভার টেবিল থেকে বিদায় করে দিয়ে, উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যায় না বলে পদ শুন্য রাখলে দিনদিন এই জটিলতা বাড়বে বরং কমবে না।
লেখক : সভাপতি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কেন্দ্রীয় কমিটি
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ