রোহিঙ্গা ইস্যু : বন্ধুত্বের ফাইন প্রিন্ট
মিনা ফারাহ
-এথনিক ক্লিনজিং চলাকালীন সুচির সাথে সাক্ষাৎ করে মিয়ানমারকে পূর্ণ সমর্থন মোদির।
-অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা না দেয়ার ঘোষণা আমেরিকার।
-মার্কিন মিডিয়াতে রোহিঙ্গা অনুপস্থিত।
-চীন-রাশিয়ার ঘোষণা, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। ত্রাণ সহায়তা দেবে কিন্তু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের পক্ষে থাকবে পরাশক্তিরা।
-এথনিক ক্লিনজিং ধামাচাপা দিয়েছিল মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি রেনেটা লক।
-ইইউ রাষ্ট্রদূতের ঘোষণা, মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে সীমাবদ্ধতা আছে।
-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের মন্ত্রীর মুখে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি যেন বিহারি বিষয়ে ভুট্টোর প্রত্যাবর্তন…
একনজরে কর্পোরেট ষড়যন্ত্র : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বিবিসি নিউজের জোনাহ্ ফিশার। হন্তাদের পরামর্শে নির্যাতিত এলাকা পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বাধা এবং দুর্ভিক্ষের খবর গোপন রেখেছিলেন জাতিসংঘের এই প্রতিনিধি।
নয়া দিগন্ত ২৯ অক্টোবর, চীন-রাশিয়ার বিরোধিতায় সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ। ১৪ অক্টোবর, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকেরা নীরব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৪ অক্টোবর, তোফায়েল আহমেদ, ‘ইপিজেড করতেই রোহিঙ্গাদের তাড়াচ্ছে মিয়ানমার।’ (এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে? ক্ষমতাসীনদের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যাখ্যা কী?)
ইত্তেফাক ১৮ অক্টোবর, ‘একদিনেই ৫০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ’ (অনুপ্রবেশ শব্দটি সন্ত্রাসী বা গুপ্তচর। প্রকৃত শব্দ শরণার্থী। ২০১৬ সালেও এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঢুকেছে কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা চুপ)।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ১৮ অক্টোবর, মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘের স্টেটমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে চীন-রাশিয়া। গণহত্যা চলাকালে তৈরি রিপোর্টটি ব্লক না করলে পরিস্থিতি হয়তো নিয়ন্ত্রণে থাকত।
২৯ সেপ্টেম্বর, খ্রিস্টিয়ান সাইন্স মনিটর, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভক্ত নিরাপত্তা পরিষদকে চীন-রাশিয়া মিলে বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নয়, পক্ষে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিবের ১০ অক্টোবরের বক্তব্য, ‘২০০৮-০৯তে যখন এই বিষয়ে কাজ করছিলাম, তখন বলেছিলাম, রোহিঙ্গা সমস্যা যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে…। গত বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠালে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছু সুপারিশ নাকচ করে বলেন, ‘এগুলোর সময় এখনো আসেনি।’ … টিক চিহ্ন দিয়ে বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার নির্দেশ। … গত বছরেই বুঝতে পারি, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে মিয়ানমার।’
১৬ অক্টোবর, গার্ডিয়ান, ‘মিয়ানমারের অনুরোধে খবর গোপন করেছে জাতিসংঘ’ (বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি লিখছে গার্ডিয়ান পত্রিকা।)
‘রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশইন করছে ভারত’, ১৯ অক্টোবর, নয়া দিগন্ত।
ইত্তেফাক ১৭ অক্টোবর, চীনের দ্য গ্লোবাল টাইমসের বরাত দিয়ে যা লিখেছে, ষড়যন্ত্রের সূক্ষ্ম বার্তা।
ফাইন প্রিন্ট যারা পড়তে পারে না, রাজনীতি তাদের জন্য নয়। ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টায় ভারত-চীন যৌথভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে। বেইজিং ও নয়া দিল্লির স্বার্থ বজায় রেখে, দেশ দুটি রাখাইনে ত্রাণ পাঠাতে, বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসনে এবং মিয়ানমারের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সহায়তা দিতে পারে।’
কন্সপিরেসির আরো নমুনা : ১. আগস্টের ঘটনা যখন অক্টোবরের বিভীষিকা, সেই অক্টোবরেই কিনা মিয়ানমার থেকে প্রায় দুই লাখ টন আতপ চাল ক্রয়? ২. ভারতের সাথে আরো ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি (সর্বমোট ১৪ বিলিয়ন)! ৩. চীনাদের দিয়ে পদ্মা সেতুর স্প্যান উদ্বোধন এবং বিনিয়োগ বৈঠক (সর্বমোট ৩৬ বিলিয়ন)! ৪. বিতাড়িত প্রধান বিচারপতির পরেই হন্তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়া রাশিয়ার প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শন এবং সমঝোতা চুক্তি… ফাইন প্রিন্টগুলোই আসল।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন