৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন চায় না জনগণ
বাংলাদেশে আরেকটি নির্বাচন করতে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালে এ দেশে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় পাস করেছিলেন। যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছিল, সেখানেও ভোট কারচুপি, বিশৃঙ্খলা, ভোটারদের কম উপস্থিতি, সব মিলিয়ে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন বলা চলে। এই নির্বাচনকে কলঙ্কিত, নিন্দিত নির্বাচন বলা যায়। আমরা যে আন্তর্জাতিক মানের কথা বলেছি, সে মানের প্রয়োজন ওই নির্বাচন পূরণ করতে পারেনি। পূরণ করতে না পারার পর জাতীয়ভাবে, আন্তর্জাতিকভাবে আমরা কিন্তু সম্মান অর্জন করতে পারিনি। দেশে-বিদেশে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। তখন নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলে এটাকে কিছুটা গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করা হয়। আমি আশা করব, আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন যাতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের মত নিন্দিত বা ধিকৃত না হয়। যাতে একটা সম্মানজনক, গ্রহণযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং যারা ভোটে হয়েছিলেন, তারাও কিন্তু ওইভাবে সম্মানিত হতে পারেননি। নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ সম্মানিত না হলে বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে না আসলে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তাদের সম্মান করে না। দেশের মানুষতো সম্মান করেই না এবং প্রশংসা করে না। তাতে কি হয়, দেশের যে কাজটা করার কথা সে কাজটা থেকে যায়। আগামী নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া একটি শর্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এটি খুব সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে প্রধানমন্ত্রী সম্মানিত হবেন, দেশ সম্মানিত হবে। আর যদি আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মানিত না হন, দেশে আবারও যদি একটি প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচন হয়, তাহলে বহির্বিশ্বে দেশের মান-সম্মান স্থায়ীভাবে বিনষ্ট হবে। আমি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যকে সম্মান প্রদর্শন করবেন। এতে তিনি নিজেও সম্মানিত হবেন। সংবিধানের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটার কোন উত্তর দিব না। শুধু বলব, দেশের জন্যই তো সংবিধান। সময়ের প্রয়োজনে সংবিধান আবারো সংশোধন করা যায়। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে, সবার উপরে দেশ। আমরা জনগণ সে কারণে দাবি করছি, একটা গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন দিতে হবে, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করে এবং নিয়ম রক্ষার নির্বাচন আমরা আর দেখতে চাই না। জাতীয় নির্বাচনের একটা মান থাকা উচিত। এটা হতে হবে এক্সেপ্টেবল । তাই নিয়ম রক্ষার নির্বাচন এর কথা আর শুনতে চাই না। এবার শুনতে চাই অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা। এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নির্বাচন যাতে হয়, পৃথিবীর সবাই যাতে আমাদেরকে সম্মানজনক চোখে দেখে, এ ধরনের নির্বাচন আমরা চাই। আর নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন, তাদের ব্যাপারেও উভয় দল বিশেষ করে বৃহত্তর দলগুলোকে স্বচ্ছ থাকতে হবে। মনোনয়ন বাণিজ্যের কথাও মানুষ আর শুনতে চায় না। টাকার বিনিময়ে দলের যে কোন লোককে প্রার্থী করা ঠিক নয়। কারণ, এটা পর্লামেন্ট। এটা খেলার জায়গা নয়, এটা বাচ্চাদের খেলাঘর নয়, এটা সিরিয়াসলি ভাবতে হবে সব দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে। পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন করা হয় দেশের জন্য, জাতির জন্য, জনগণের জন্য । এই যে বাংলাদেশে একটির পর একটি গুম হচ্ছে, হত্যা হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ হচ্ছে, এই অপরাধগুলোর প্রতিকারের জন্য আইন দরকার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আইন দরকার। এই আইনটা করতে হলে উচ্চশিক্ষিত লোক দরকার। প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা সম্পন্ন যোগ্য লোক দরকার আইন তৈরির জন্য, যারা নিজস্ব যোগ্যতায় আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হবেন। এবিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে দেশের জন্য যেমন কল্যাণকর হবে, নির্বাচনে ভাল ফলাফলও লাভ করা সহজ হবে।
পরিচিতি : সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ও আইন বিশ্লেষক
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
সম্পাদনা : আশিক রহমান