ইতিবাচক ভূমিকায় মিয়ানমার : কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে নেপিডোতে বৈঠক আজ
তরিকুল ইসলাম : আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নীরবতা ভেঙে অবশেষে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। দেশটি এমন এক সময়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলো যখন মিয়ানমারের রাজধানীতে দু’দিন ব্যাপী এশিয়া-ইউরোপ (আসেম) সম্মেলন চলছিলো। সম্মেলনের উদ্ভোধনী ভাষণে মিয়নমারের নেত্রী অং সান সুচি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো বক্তব্য না রাখলেও বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের বক্তব্য তুলে ধরাসহ রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রবেশের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন তারা। নিজ দেশের রাজধানীতে কড়া সমালোচনার মধ্যে দিয়েই আসেম সম্মেলনের শেষদিন গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অং সান সু চি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়েই চলতি সপ্তাহে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সমঝোতায় পৌঁছাবে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে সুচি’র সঙ্গে আজ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অং সান সুচি বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই আলোচনার ফলাফল হিসেবে শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক সই করা সম্ভব হবে, যাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যাওয়া সবাইকে নিরাপদে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে মাহমুদ আলী সম্মেলন পরবর্তী দু’দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) নেপিডোতে অবস্থান করবেন। দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ফেরত ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে চায়। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হতে পারে। আর সেই চুক্তি অনুসারে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা ফিরে গেলে কতটুকু নিরাপদ থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বিশ্লেষকরা। রাখাইনে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগিই নারী ও শিশু। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে ‘মডেল ভিলেজ’ নামে নতুন এক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেবে মিয়ানমার সরকার। এতে তাদের নিজেদের জমি বা বাড়ি ফিরিয়ে পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। চলতি বছরেরর অগাস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ এই অভিযানকে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের আচরণকে ‘অমানবিক জাতিবিদ্বেষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও আইনি স্বীকৃতি পুনর্বহাল এবং দেশের বৈষম্যমূলক নাগরিক আইন সংশোধন করারও তাগিদ দিয়েছে অ্যামনেস্টি। পশ্চিমা অধিকার সংগঠনগুলো মিয়ানমারের নেত্রী নোবেলজয়ী সু চির সমালোচনা করে আসছে বেশ আগ থেকেই। তারা বলছে, সুচির সরকার রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে যথেষ্ট কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন