নরেন্দ্র নাথ মজুমদার
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্ম, অর্জুনের বানে ভূমিতে ধরাশায়ী হয়ে প্রচ- বেদনায় ছটফট করছিলেন। একে একে সবাই ওনাকে দেখতে আসছিলেন। একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণও ওনাকে দেখতে এলেন। শ্রীকৃষ্ণকে দেখে ভীষ্ম বললেন,
‘হে জনার্দন, আমি পূর্ব জন্মে এমন কি পাপ করেছিলাম যে এই জন্মে এত বড় শাস্তি এত কষ্ট আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে? ভগবান বললেন, ‘আপনি তো
নিজেই পূর্ব জন্মের কথা স্মরণ করতে পারেন, তাহলে আপনি নিজেই দেখুন না আপনি পূর্ব জন্মে কি পাপ করেছিলেন? ভীষ্ম বললেন, ‘আমি তো দেখতে
দেখতে গত ১০০ জনমের কর্ম দেখে ফেলেছি, কিন্তু এই ১০০ জনমের মধ্যে আমি এমন কোনো কর্ম করিনিযেটাতে আমি এত বড় শাস্তি পেতে পারি’।
ভগবান বললেন, ‘আপনি কৃপা করে এই ১০০ জনমের ঠিক একটি জনম আগে দেখুন (অর্থাৎ ১০১নং জনম), উওর আপনি পেয়ে যাবেন’।
তখন পিতামহ ভীষ্ম চোখ বন্ধ করে ধ্যান পূর্বক দেখতে লাগলেন-
ঐ জনমে তিনি একজন খুবই ধার্মিক রাজা ছিলেন। একদিন তিনি বিশাল সৈন্যদল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে একটি সাপ এসে তাদের যাত্রায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এক সৈনিক এসে বললো, ‘মহারাজ, একটি সাপ রাস্তার মাঝে বসেআছে, কি করব? ‘রাজা বললেন, ‘তুমি সাপটিকে একটি লাকড়িতে বেঁধে পাশের জঙ্গলে ফেলে দাও’।
সৈনিক তাই করল, কিন্তু সাপটি জঙ্গলে একটি বিশাল কাঁটার ঝোপের মধ্যে আটকে গিয়ে প্রচ- যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে অবশেষে পাঁচদিন পর মারা গেল। পিতামহ ভীষ্ম তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, ‘দেখলাম আমার পাপ কর্ম, কিন্তু আমিতো সাপটিকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিলাম, নাহলে তো সাপটি আমার রথের চাকার নীচে চাপা পরেই মারা যেত’।
ভগবান বললেন, ‘কিন্তু আপনি তো ঐ সাপটির কি পরিণতি হলো তা একবারও ফিরে দেখলেন না বা ঐ সাপটিকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেন নি, তাই আজ আপনার এই পরিনাম। অথচ আপনার পুন্য কর্ম এত বেশি ছিল যে গত ১০০ জনমেও আপনি কোনো পাপের ফল ভোগ করেন নি’। মানুষ জেনেই হোক বা না জেনেই হোক যে কর্ম করছে তার ফল ভোগ অবশ্যই করতে হবে। কেউ এই জনমে বা কেউ পরের জনমে ভোগ করছে।