কৃষ্ণ কান্ত বৈরাগী
সনাতন হিন্দু ধর্ম পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র মনে করে, আত্মার বিনাশ নেই। মানুষের মৃত্যুর পরে পুনর্জন্মের মাধ্যমে তার আত্মা নতুন জীবদেহে প্রবেশ করে। কিন্তু মৃত্যুর পরে একটি আত্মার কী পরিণতি হবে তা নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে উল্লিখিত তেমনই পাঁচটি বিষয়ের উল্লেখ করা হল এখানেÑ ১. মানুষের কৃতকর্ম :
যে মানুষ তার জীবদ্দশায় পাপ কর্মে লিপ্ত থেকেছে, মৃত্যুর পরে তার আত্মা নরকে গমন করে এবং যথোপযু?ক্ত শাস্তি ভোগ করে। বিপরীতভাবে, ভাল কাজের প্রতিফল হিসেবে স্বর্গসুখ ভোগ করার সুযোগ ঘটে আত্মার। ২. মৃত্যুর সময়ে মানুষের মানসিক অবস্থা :মৃত্যুর সময়ে মানুষ যা ভাবছে বা যা কামনা করছে তার ওপরও নির্ভর করে মৃত্যুর পরে তার কি গতি হবে এবং পরের জন্মে কি পরিচয় নিয়ে তাকে জন্মগ্রহণ করতে হবে। যেমন, কোনো মানুষ যদি মৃত্যুকালে তার পরিবারের কথা ভাবে, তাহলে মৃত্যুর পরে স্বর্গলোকে তার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে তার পুনর্মিলনের সম্ভাবনা রয়েছে। পরের জন্মে ওই পরিবারেরই সন্তান হিসেবে তার জন্মগ্রহণের সম্ভাবনাও রয়েছে যথেষ্ট।
মৃত্যুকালে অর্থের চিন্তা করে যে, পরের জন্মে তার ব্যবসায়ী হয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ৩. মৃত্যুর সময় ও পরিস্থিতি : কোন সময়ে ও কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যু হচ্ছে তার উপরও নির্ভর করে মৃত্যুর পরে আত্মার কী গতি হবে। যেমন, যুদ্ধরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে বীর যোদ্ধাদের আত্মায় পরিপূর্ণ স্বর্গারোহণ তার সুনিশ্চিত। কোনো শুভদিনে পূজার্চনা করার সময় মৃত্যু হলে সেই ব্যক্তির পুরনো সমস্ত পাপ মুছে যায় ও সে স্বর্গযাত্রা করে। ৪. সন্তানের ক্রিয়াকর্ম :
সন্তানের কর্তব্য পিতা বা মাতার মৃত্যুর পর যথাবিহিত সৎকার ও শ্রাদ্ধশান্তি করা। তা যদি না হয় তবে মৃত ব্যক্তির আত্মা যথোচিত ধামে গমন করতে পারে না।
৫. ঈশ্বরের দয়া :
কোনো ব্যক্তি নিজস্ব ঈশ্বরভক্তির জোরে যদি ঈশ্বরের করুণা লাভ করতে পারে তাহলে মৃত্যুর পরে শ্রেষ্ঠতম স্বর্গে যাত্রার পথ তার প্রশস্ত হয়।