হিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস
ভারতীয় পরম্পরায় চরণস্পর্শ করে সম্মান প্রদর্শনের রীতি অতি প্রাচীন পরম্পরা। যতদূর জানা যায়, বৈদিক যুগ থেকে এই রীতি মান্যতা পেয়ে আসছে। ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’ ইত্যাদি মহাকাব্য এবং বিবিধ পুরাণে বার বার এই প্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়। কেবল হিন্দু ধর্ম নয়, বৌদ্ধ ধর্মেও এই প্রথা বিশেষ ভাবে অনুসৃত হয়। কিন্তু প্রশ্ন এই, ঠিক কী কারণে এই প্রথা হাজার হাজার বছর ধরে টিকে রয়েছে আমাদের সংস্কৃতিতে।
১.অগ্রজের পদস্পর্শের গুণাবলি বেদেই বর্ণিত রয়েছে। বলা হয়, অগ্রজের মধ্যে স্থিত শুভশক্তি এই প্রথায় প্রণামরত অনুজের শরীরে সঞ্চারিত হয়।
২. ‘মনুস্মৃতি’ ও ‘শ্রীমদ্ভাগবৎ গীতা’-য় চরণস্পর্শের যে ক্রিয়া বর্ণিত হয়েছে, তার অন্যতম অঙ্গ হল অনুজের মস্তক স্পর্শ করে অগ্রজের আশীর্বাদ। এতেই শুভশক্তির স্পন্দন অনুজের শরীরে সঞ্চারিত হয়।
৩. শুভশক্তির এই সঞ্চরণকে নিয়মের মধ্যে আনতে বৈদিক শাস্ত্রাদি কিছু নির্দেশ দেয়। যেমনÑ প্রত্যূষে পিতা-মাতাকে প্রণামের বিধান শাস্ত্র দেয়। প্রত্যূষে এই কাজটি করলে শুভশক্তির স্পন্দন সারা দিন ধরে ক্রিয়া করতে পারে।৪.আবার যখন সন্তান তার পিতা-মাতার চরণ স্পর্শ করে, তখন সন্তানের দেহাভ্যন্তরস্থ শুভ-স্পন্দন পিতা-মাতার দেহে সঞ্চারিত হয়। এই ভাবে শুভশক্তির এক বন্ধন তৈরি হয় প্রজন্ম পরম্পরার মধ্যে।
৫.গুরুর চরণস্পর্শের দ্যোতনা একটু অন্যরকম। গুরু শিষ্যকে পথ দেখান। তার চরণ স্পর্শ করলে তার জ্ঞান, গুণ ও সাধনালব্ধ ঐশ্বর্যসমূহের স্পন্দন শিষ্যের দেহে সঞ্চারিত হয়। শিষ্য গুরু-পরম্পরার শরিক হয়ে ওঠেন।
৬.বয়ঃজ্যেষ্ঠদের চরণস্পর্শের রীতি অতীত ও বর্তমানকে একত্র করে। দুই কালের শক্তিস্পন্দনকে ভবিষ্যতের দিকে বইয়ে নিয়ে যায়।
৭.চরণস্পর্শের প্রথা সম্পর্ক বন্ধনকে দৃঢ় করে। ৮.অগ্রজা নারীকে অনুজ পুরুষ চরণস্পর্শ করে প্রণাম করলে স্ত্রীশক্তির স্পন্দন পুরুষ শরীরে সঞ্চারিত হয়। সৃষ্টির আদি ভাব এই ভাবে বয়ে যায় আগামীর দিকে। লেখক : অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক