![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
পোপ দ্বিতীয় জন পলও বাংলাদেশে এসেছিলেন, ৩১ বৎসর আগে…
এলড্রিক বিশ্বাস
দেখতে দেখতে ৩১টি বছর চলে এসেছে। ১৯শে নভেম্বর, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ বাংলাদেশের খ্রিস্টভক্তদের জন্য ছিল একটি বিশেষ দিন। সকাল থেকেই মানুষ যাত্রা শুরু করেছিল বিশ্বরোডে অবস্থিত আর্মি ষ্টেডিয়াম (পূর্বে এরশাদ আর্মি স্টেডিয়াম) অভিমুখে। পূণ্যপিতা সাধু ২য় জন পল এই বিশেষ দিনে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
সেদিন প্রায় ৫০,০০০ খ্রিস্টভক্ত সমবেত হয়েছিল আর্মি ষ্টেডিয়ামে। সবার উদ্দেশ্য ছিল একটি, লক্ষ্য ছিল অভিন্ন, পূণ্যপিতা সাধু ২য় জন পলকে এক নজর দেখা ও তাঁর আশির্বাদ লাভ করা। তিনি আল-ইতালিয়ার বিশেষ বিমান থেকে নেমে প্রথমেই বাংলার মাটি চুম্বন করেন।
পোপ মহোদয়ের আগমন উপলক্ষ্যে শুধু ঢাকায় নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মপ্রদেশ, ধর্মপল্লীতে ছিল প্রাণের জোয়ার। বাংলাদেশে ক্যাথলিক চার্চ সবাই একপলক দেখতে চায় খ্রিস্টের দৃশ্যমান প্রতিনিধিকে। প্রভু যীশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্য পিতরকে বলেছিলেন- ‘পিতর তুমি পাথর, তোমার উপর আমি আমার মন্ডলি স্থাপন করবো’ সেই বাণী থেকে আজ পর্যন্ত খ্রিস্টের দৃশ্যমান প্রতিনিধি হিসেবে বর্তমানে পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক মন্ডলির প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পূণ্যপিতা সাধু ২য় জন পল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এ পর্যন্ত সকল পোপের দিক থেকে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন ও বহুদেশ সফর করেন। ক্যারল ভয়তিলা যিনি পোপ ২য় জন পল নামে পরিচিত তিনি অ-ইতালীয় ও কম্যুনিষ্ট দেশ থেকে প্রথম পোপ। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি পোপ নির্বাচিত হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ডে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি যাজক, ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আর্চবিশপ, ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কার্ডিনাল হন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের তিনি পোপ পদে অভিষেকের রজত জয়ন্তী পালন করেন। তিনি ২৭ বৎসর পোপ ছিলেন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা এপ্রিল ৮৪ বৎসর বয়সে এ মর্তের মায়া ত্যাগ করেন।
তাঁর সফর খ্রিস্টভক্তদের বিশ্বাসকে আরো গভীর করেছে ও জ্ঞানের ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধময়। পোপ ২য় জন পল ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ভাটিকানে পোপ ফ্রন্সিস কর্তৃক সাধুশ্রেণীভুক্ত হন।
সাথে পোপ জন পল ২৩ তাঁকেও সাধুশ্রেণীভুক্ত করা হয়। পোপ ২য় জন পলের বাংলাদেশে আগমনের অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল মহাখ্রিস্টযাগ: সকাল ৯টায় পোপ মহোদয় স্টেডিয়ামে পৌঁছান। তাঁর আগমনের পূর্বাহ্নে উপস্থিত খ্রিস্টভক্তরা স্বাগতম পূণ্যপিতা, স্বাগতম, পূণ্যপিতা, পূণ্যপিতা জয় হোক, পোপ জন পল, যীশুতে প্রণাম ধ্বনিতে পুরো স্টেডিয়াম হয় আনন্দে মুখরিত। পোপ মহোদয় এসে হাত নেড়ে স্বাগত জানান। পরিপূর্ণ গ্যালারীসহ পুরো স্টেডিয়াম খ্রিস্টভক্তদের আগমনে পরিপূর্ণ। এ সময় গানের দল গেয়ে উঠে, প্রেরিত জন তুমি এসেছো। এসেছো সোনার বাংলাদেশে। এরপর তিন ঘন্টা ব্যাপী মহাখ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠানের মধ্যে বিশেষ আর্কষণ ছিল পূর্ণ্যপিতা পোপ ২য় জন পল কর্তৃক ১৮ জনকে যাজকাভিষেক।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই যাজকাভিষেক উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা হয়ে আছে। খ্রিস্টযাগ শেষে তাঁর আশির্বাদ নিয়ে সকলে ফিরে যায়।
সাভার স্মৃতিসৌধে: দুপুরে ভাতিকান দূতাবাসে বিশ্রামের পর পূণ্যপিতা ১৯৭১ খ্রিস্টব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভার স্মৃতিসৌধে যান। সেখানে তিনি বইতে লিখেন- ‘ন্যায়বানের আত্মা ভগবানেরই হাতে’ সেখানে তিনি একটি উদয়পদ্ম-বৃক্ষ রোপণ করেন। যে গাছটি আজও দাঁড়িয়ে আছে পূণ্যপিতা সাধু পোপ দ্বিতীয় জন পলের স্মৃতি নিয়ে।
রমনা ক্যাথিড্রালে সম্বর্ধনা: আর্চবিশপ ভবনের মাঠে সন্ধ্যায় পূণ্যপিতাকে বাংলাদেশের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা দেয়া হয় অনুষ্ঠানে অন্যান্য ধর্মের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গভবনে নাগরিক সম্বর্ধনা: রাতে পূণ্যপিতা বঙ্গভবনে এক নাগরিক সম্বর্ধনায় উপস্থিত হন। ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করর্পোরেশনের মেয়র তাঁকে ঢাকা মহানগরীর সোনার চাবি উপহার দেন।
ভাতিকান দূতাবাসে: বঙ্গভবন থেকে পূণ্যপিতা ভাতিকান দূতাবাসে যান ও সেখানে বাংলাদেশের ৪ জন বিশপ ও বিদেশী বিশপদের সাথে এক ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হন। পরদিন সকাল ৮.৪০ মিনিটে তিনি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। পোপ মহোদয়ের সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন ২ জন কার্ডিনাল, ৩ জন বিশপ, ৫ জন মন্সিনিয়র, কয়েকজন ডাক্তার, সুইসগার্ডসহ ৩৫ জন এবং ৭০ জন সাংবাদিক।
এছাড়া রেডিওতে সংবাদ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে খ্রিস্টযাগের অংশবিশেষ প্রচার করে। খ্রিস্টভক্তরা অনেকেই বাসা বাড়ীতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করে। ১৯৮৬ খ্রি: প্রতিবেশী বড়দিন সংখ্যা পোপ মহোদয়ের বাংলাদেশ সফরের রঙ্গীণ ছবিসহ ছাপা হয়। বাংলার মাটিতে সাধু ২য় জন পলের সফর চিরভাস্কর হয়ে থাকবে।
অন্যান্য: এ পর্যন্ত সকল পোপের দিক থেকে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন ও বহুদেশ সফর করেন। তিনি ১০০টির বেশী দেশ ভ্রমণ করেন। ২৭ বার বিশ্ব ভ্রমণ করেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই মে তিনি আততায়ীর হামলা থেকে রক্ষা পান।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)