সমঝোতা স্মারকে কার লাভ, কার ক্ষতি আফসান চৌধুরী
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে এ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার অনেক কথাই বলেছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের ওপর নির্ভরশীল নয়। মিয়ানমার সরকার যখন চাইবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে যে সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে, এর পেছনে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছে চীন। চীন চাপ দিচ্ছে, ফলে এখন মিয়ানমারও কিছুটা চাপ সহ্য করছে। চীনের জন্য এটা একটু অসুবিধার হয়ে পড়েছে। কারণ চীনকে অনেকেই খারাপ বলছে। মিয়ানমারের পেছনে তারাই একমাত্র প্রধান শক্তি। জাতিসংঘ বলেছে মিয়ানমার রাখাইনে গণহত্যা করেছে। এই পরিস্থিতিতে চীন এবং মিয়ানমার তাদের অবস্থানটা সামলে নিয়েছে। বাংলাদেশ অনেক আগে থেকে বলে আসছে, এই গণহত্যা মিয়ানমার সরকারকর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে চালানো হয়েছে। এখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারেও মিয়ানমারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হবে।
এই সমঝোতা স্মারক রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারেই করা হচ্ছে, নাকি শুধু কালক্ষেপণের জন্য করা হচ্ছেÑ এটা এখনই বলা যাবে না। যে সমঝোতা হয়েছে তাতে চলতি বছরের আগস্ট থেকে যে সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাদের ফেরত নেওয়া হবে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, এর আগে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তারা মোটামুটিভাবে বাংলাদেশেরই হয়ে গেল। এবারই প্রথম রোহিঙ্গারা এদেশে আসেনি, অনেক আগ থেকেই আসছে। তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে এই সমঝোতায় কিছুই উল্লেখ নেই। তার মানে তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক। তাহলে তাদের এখন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে আসা বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই এখন আর মিয়ানমারে যেতে রাজি হচ্ছে না। কারণ তারা বাংলাদেশেই এখন নিরাপদ বোধ করছে।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো কিছুই বলতে চান না। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিলে মোটামুটি একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখন চীনকে মানুষ কম গালি দিবে, সবাই বলবে হ্যাঁ সমঝোতা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার তো রাজি হয়েছে। এটা হলো মিয়ানমার এবং চীনের জন্য একটা বিজয়। আর আমাদের তো দক্ষতা, ক্ষমতা ও ইচ্ছে কোনোটাই নেই। আমাদের যে কাজটা করা উচিত ছিল সেটা হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিনিদের সঙ্গে কথা বলা। কারণ, বড় দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র তারাই রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলছে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার, রাজনীতিকেরা মার্কিনিদের খারাপ বলতে বলতে এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছেন যে, এখন এটাকে উল্টোদিকে ফেরানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মার্কিনিদের ছাড়া আমাদের পাশে আর কেউ দাঁড়াচ্ছে না। চীন, ভারত, রাশিয়া কেউ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে না। আমরা ভাবছি চীন এবং ভারত আমাদের দুই প্রধান শক্তি। মার্কিনিদের সমর্থনের সুযোগটি আমাদের কাজে লাগানো দরকার ছিল। আমরা এই সুযোগটি হারিয়ে ফেলেছি।
পরিচিতি: গবেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও খন্দকার আলমগীর হোসাইন