ঈদের দিন। সবার মনে আনন্দ। কারও বাসায় খিচুড়ি সেমাই, কারও বাসায় হালুয়া রুটি, কেউ রান্না করে গোস্ত আরও কত কি। ছোট-বড় ঈদের দিনে সবাই নতুন জামা-কাপড় পরে চলছে ঈদগাহে। আমাদের নবীও চলেছেন ঈদের জামাতে। হঠাৎ তিনি দেখলেন দূরে কোথাও গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে একটি বালক। একদম একা। ঈদের দিন সাধারণত বাচ্চারা একা থাকে না, হৈ চৈ করে। গল্প করতে করতে মাঠ কিংবা বেড়াতে যায়। কিন্তু এ ছেলেটি একা দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ ভার। নবী তার কাছে গেলেন। বালকটির মাথায় হাত বুলালেন। জিজ্ঞেস করলেন, একা দাঁড়িয়ে কি করছো? সকালে খাবার খেয়েছো? নবীর হাতের পরশে তার মনের দুঃখ আরও বৃদ্ধি পেলো। সে কেঁদে ওঠলো। বললো, অন্য ছেলেরা সুন্দর জামা-কাপড় পরে আনন্দ করছে। আমার তো ভালো জামা-কাপড় নেই। নবী তার কথা জানতে চাইলেন। দুনিয়াতে তার কেউই নাই। মা-বাবা দুনিয়া ছেড়ে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। সে এখন সম্পূর্ণ এতিম। প্রিয়নবী সকল ছেলে-মেয়েদের আদর করতেন। যাদের মা-বাবা নেই, তাদের বেশি আদর করতেন, স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতেন। এতিমদের আদর করা আমাদের নবীজির সুন্নত। নবী তাকে বললেন, ‘আমি তোমাকে তোমার বাবা মতো আদর করবো, আর আয়েশা তোমাকে তোমায় মায়ের মত আদর করবে। তুমি কি আমার বাড়িতে যাবে? ছেলেটি এক কথায় রাজি হয়ে গেলো। বিবি আয়েশার কোনো ছেলে ছিলো না। তিনি এ ছেলেকে পেয়ে খুব খুশি হলেন। নিজ হাতে আদর করে গোসল করালেন। চোখে সুরমা লাগালেন। নতুন জামা-কাপড় পরিয়ে সুগন্ধি মাখিয়ে দিলেন। কোলে নিয়ে চুমু খেলেন। তাকে খাইয়ে ঈদের মাঠে যেতে বললেন। এবার ছেলেটির মনে কি আনন্দ! নতুন জামা পরে সে হাটে না, ইচ্ছামত লাফায়। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গিয়ে পৌঁছলো ঈদগাহে। অন্য ছেলেরা দেখে তো অবাক। কিছুক্ষণ আগে তাকে দেখেছে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে। এখন তার মুখে উজ্জ্বল হাসি। মনে আনন্দের ছাপ। সে চোখে মুখে কথা বলে। সে নবী ও বিবি আয়েশার আদরের কথা খোলে বললো। শুনে ছেলেরা তো আরও অবাক। কেউ কেউ বলে ফেললো, আমাদের যদি মা-বাবা না থাকতো, তাহলে আমরাও নবী ও বিবি আয়েশার ছেলে হতে পারতাম। আর এমন সুন্দর জামা আর আদর পেতাম। তখন কতই না মজা হত। লেখক: শিক্ষক, বাইতুন নূর মাদরাসা ঢাকা।