লালমাই পাহাড়ের আর্তনাদ
সাইফুর রহমান সাগর
কুমিল্লা কেন বিখ্যাত? একটাই উত্তর আসবে, লালমাই ময়নামতি পাহাড়ের জন্য। তাই বিশ্বের বেশির ভাগ পাহাড়ি অঞ্চলের উপরিভাগ মানবশূন্য থাকে। বেশিরভাগ দেশেই আকাশচুম্বী পাহাড়কে কেটে টিলা বা ছোট পাহাড়ের মতো বানাতে শত শত বছর কাটিয়ে দেয়। সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে মানব আরোহন ও নিরাপদ উচ্চতার টিলা একমাত্র কুমিল্লার লালমাইতে আছে। শত শত টিলার এক অপরূপ সন্নিবেশন লালমাই ময়নামতিতে। নিরাপদ ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দূর দূরান্ত থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আসে এখানে অবকাশকালীন সময় কাটাতে। পাহাড়কে ধরণীধর বলা হয়, মানে হলো ধরণীকে যে ধরে রাখে। সৃষ্টির এই বিশালাকার ধরণীর স্তম্ভ হলো পাহাড় বা পর্বত। প্রকৃতির নিষ্ঠুর ভূকম্পন থেকে রক্ষা করে থাকে এই পাহাড় এবং টিলা। বাংলাদেশে খুব কমসংখ্যক এলাকাজুড়ে রয়েছে পাহাড়। দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থানে প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে যেখানে কোটি কোটি ডলারের প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে প্রকৃতির লীলাভূমি ও ভূপৃষ্ঠ রক্ষাকারী পাহাড়কে নিয়মিত নিঃশেষ করা হচ্ছে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে এই পাহাড় এবং টিলাগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করে চলেছে ভূমিদস্যু ও মাটি বিক্রেতারা। পাহাড় কেটে সমান্তরাল করে আবার সেই জমি বিক্রি করছে সেখানকার ভূমিদস্যুরা। পাহাড়ের প্রয়োজনীয়তা না জানার কারণে হাজার হাজার একর পাহাড় কটে সমান্তরাল করছে স্বার্থান্বেষী মহল। রাজনৈতিক আশীর্বাদে যারা এই সম্পদ দেখার দায়িত্বে রয়েছে, তারাই ভোগ করছে এই অপকর্মের আর্থিক সুবিধা। প্রশাসনিকভাবে আদালত থেকে পাহাড় না কাটার নির্দেশনা থাকলেও মানছে না কেউই। পাহাড়ে আশ্রিত মানুষ সেই পাহাড়কে কেটে তার বুকে তৈরি করছে বাড়িঘর। এভাবে চলতে থাকলে খুব নিকট ভবিষ্যতে আমরা পুরো লালমাই পাহাড়ের সমাধিস্থল দেখতে পাবো। একদল স্থানীয় ও চিহ্নিত পাহাড় দস্যুদের যদি এখনই বাঁধা না দেয়া হয়, তাহলে অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে লালমাইয়ের বাকিটুকু পাহাড়ি অঞ্চল। সরকারের সুদৃষ্টি না দেয়া হলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে আরও বেশি হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে নিঃসন্দেহে। পাশাপাশি এই এলাকাটিকে সরকারের বনবিভাগের আওতাধীন এনে, বিশাল বনায়নের সম্ভাবনাময়ী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। লালমাটির বিলুপ্তপ্রায় অঞ্চলটিকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। বিশ্ব জলবায়ু শর্তানুযায়ী লালমাইকে বন ও পরিবেশ রক্ষার আওতাধীন এনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । যারা এই প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করছে, তাদের বোঝাতে হবে এই পাহাড় কারো মালিকানা সম্পদ নয়, এইসব এলাকা সম্পূর্ণ সরকারি ও প্রাকৃতিক সম্পদ। পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ দ-নীয় অপরাধ। এই এলাকাকে ধ্বংস করা মানে নিজের প্রজন্মকে ধ্বংস করা। শুধু সাময়িক সামান্য অর্থের লোভে যে কাজটি করা হচ্ছে, তা কখনো হাজার গুণ অর্থ ব্যয় করেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। পাহাড় দস্যুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান এখন সময়ের দাবি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন