সুখ
নশ্বর সুজয় : এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই জন্ম হতে মৃত্যু অবদি সুখের পেছনে লাগামহীন ছুটছে আমি তুমি আমরা সবাই। অন্যান্য প্রাণীকূলও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে মানুষই পারে একমাত্র সুখকে নানা কৌশলে ভোগ করতে। কিন্তু আমরা সিংহভাগ মানুষই জানি না সুখ যে শুধু অনুভবের বিষয়। না সুখকে জোর করে অর্জন করা যায়, না একে দখল করা যায়। অর্থাৎ শত চেষ্টা আর শত পরিপূর্ণ থাকার পরও সুখি হওয়া যায় না। নিজের স্বাভাবিক জীবন থেকেই সুখ খুঁজে নিতে হয়। তথাগত বুদ্ধের ভাষায় সন্তুষ্টিই পরম ধন। আর এ সন্তুষ্টি নামক ধনই হল জাগতিক সুখের মূল। একজন মানুষ অর্থ বিত্তে ভোগ সম্পত্তিতে যতই ডুবে থাকুক না কেন যদি সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে ঐ অর্থ বিত্ত তার জীবনে মূল্যহীন। আবার অন্যদিকে অনেকে দিনে এনে দিনে খেয়েও পরম তৃপ্তির স্বাদ নিচ্ছে।
মোর্দ্দা কথা হল- সুখ অর্থ বিত্তের উপরও নির্ভর করে না। যদি তাই হতো তাহলে পৃথিবীর সেরা ধনী ব্যক্তিটিও সবচেয়ে বেশি সুখী বলা যেত। সুখ নির্ভর করে সুখ কি তা জানা ও বোঝার উপর। বহু মানুষ আছে, তারা আজীবন অজানা সুখ খুঁজেই প্রাপ্ত সুখগুলোকে নষ্ট করে ফেলে। তারা তাদের প্রাপ্তিগুলোকে ছোট করে দেখে বা গুরুত্বহীন ভাবে। আর অন্যের প্রাপ্তিকেই লক্ষ হিসেবে নির্ধারন করে নেয়। ব্যাপারটা কিছুটা ঘরে থেকেই ঘর খোঁজার মত। আপনি কখনই একটা ঘরে থেকে অন্য একটি ঘর খুঁজে পাবেন না। আপনাকে ঘর থেকে বের হয়ে অন্য ঘর খুঁজতে হবে। বিষয়টিকে এভাবে বলা যায় যে, প্রতিটি মানুষই তার নিজ অবস্থান থেকে সুখি এবং সাথে সাথে কমবেশি দুখ কষ্টেরও ভাগীদার। কিন্তু সে তার সেই সুখগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে দুখকেই বড় করে দেখে। সুখের বিষয়গুলোকে মোটের উপর অগ্রাহ্য করে থাকে। তাতে করে, তার সমস্ত সত্ত্বাকে দুখ বা কষ্টেরাই ঘিরে ফেলে। আর অবহেলিত সুখেরা নির্বাক নিশ্চুপ পরে থাকে পথের ধুলায়। পৃথিবীতে এমন মানুষ নেই, যার প্রাপ্তি নেই কিংবা সুখ নেই। কিন্তু সে অন্যের সুখের সাথে নিজ সুখ বা প্রাপ্তির তুলনা করে নিজ প্রাপ্তিতে আর আনন্দ পায় না বা প্রাপ্ত সুখকে হালকা করে ফেলে। কেননা, সে সর্বদাই এমন কারো সাথে নিজের তুলনা করে, যার তুলনায় সে নিজে দুর্বল বা সমান্তুুালের নিচে অবস্থান করে। এজন্যই সুখ কি তা জানা ও বোঝা প্রয়োজন। সাথে সাথে ছোটখাটো প্রাপ্তি বা সুখকে গুরুত্ব দেয়া অত্যন্ত আবশ্যক।