ত্রিপিটক গ্রন্থ নয়, গ্রন্থমালা। ত্রিপিটক বিশ্বের যাবতীয় প্রাচীন গ্রন্থেও মধ্যে এক বিস্ময়। ধর্মগ্রন্থ হিসাবেও ত্রিপিটক এত বড় যে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। বিশ্ব সাহিত্য ও ধর্মে এত বড় গ্রন্থমালা আর দুটি নেই। প্রাচীন ভারতের শিক্ষ, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ইতিহাস জনান জন্য এই মহ্যগ্রন্থ পড়া ছাড়া উপায় নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এবং বাংলায় মাত্র কয়েক খ- অনুবাদ হওয়ার কল্যাণে ত্রিপিটকের দু’-চারটি বই আমরা পড়ার সুযোগ পাই।তার মধ্যে ধর্মপদ, জাতক, মহাবর্গ, থের গাথা, থেরী গাথা এক কথায় অপূর্ব। ধর্মপদ বাংলা ভাষায় অনেকে অনুবাদ করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্মপদের কিছু শ্লোক অনুবাদ করেন। ১৯০৪ সালে চারুচন্দ্র বসু ধর্মপদ অনুবাদ করেন। রবীন্দ্রনাথ চারটি বর্গ অনুবাদ করেন। ১৯০৫ সাল স্বামী হরিহরানন্দ ধর্মপদের পদ্যানুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালে ধর্মপদ অনুবাদ করেন ধর্মাধার মহাস্থবির। ১৯৬৬ সালে গিরিশচন্দ্র বরুয়া গদ্য অনুবাদ করেন বাংলা একাডেমী থেকে।১৯৭৩ সালে রামপ্রসাদ সেন অনুবাদ করেন। জাতক প্রথম খ- অনুবাদ করে ঈশান চন্দ্র ঘোষ ১৩৩২ সালে। থেরী গাথা অনুবাদ করেন ভিক্ষু শীলভদ্র (দ্বিতীয় মুদ্রণে সাল খুঁজে পাওয়া যায় নি) থের ও থেরী গাথা ত্রিপিটকের খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত।
থের ও থেরীগণ বুদ্ধের সময় জীবিত ছিলেন। তাঁরা সকলেই ছিলেন অর্হৎ । অর্হৎ শব্দের অর্থ জগতের তৃষ্ণাক্ষয়কারী ভিক্ষু। তাঁরা আর পৃৃথিবীতে জন্ম নেবেন না। তাঁরা নির্বাণ সুখী। এই মুক্তিলাভকারী ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীরা নিজেদের জীবনের সুখ-দুঃখের কথা গাথায় ধরে রেখেছেন। গাথাগুলো গীতিরসে ভরপুর। ধর্মজীবনের কথা, জীবনের ব্যর্থতা ও পাপ থেকে উদ্ধার ও আনন্দের কথা থের ও থেরী গাথার সম্পদ।
থের গাথাগুলো অনেকাংশে চর্যাপদের পূর্বসূরী। পাঠকদের একথা জানানোর জন্য এখানে থের ও থেরীগাথা বর্ণনা করা হল। কৌতূহলী পাঠক-পাঠিকারা এর সমর্থন পাবেন মূল বই পড়ে। আমরা শুধু কয়েককজন থের-থেরীর গাথা ও কাহিনী এখানে উল্লেখ করলাম। ধর্মকে এক পাশে সরিয়ে রাখলেও এর সৌন্দর্য ও মূল্য কম নয়। প্রাচীন সাহিত্যের দুর্লভ রতœ এই গাথাগুলোতে খুঁজে পাওয়া যাবে।