উপল বড়–য়া : অগ্রহায়ণ নিয়ে আসে শীতের আমেজ। গ্রাম-বাংলার চারদিকে মুখর হয়ে উঠে শীতের আনন্দে। ঝাঁকে-ঝাঁকে উড়ে বেড়ায় নাম অজানা অতিথি পাখি। মানুষ জবুথবু হয়ে আগুন পোহায়। আর বাজারে জমে উঠে শীতকালীন সবজি। তবে শৈশবের সেই অগ্রহায়ণের শীত আর এই বয়সে শীত-যাপনে কেমন যেন অপরিচিত গন্ধ। অগ্রহায়ণে শুরু হয় ধান কাটা। কবি জীবনানন্দ দাশের একটা কবিতা খুব মনে পড়ছে এই শীতার্ত হেমন্তে। ‘হেমন্তে ফুরায়ে গেছে পৃথিবীর ভাঁড়ারের ভাঁড়ারের থেকে/ কোথাও বা সৃষ্টির অন্ধকার রহস্যের সঙ্গে বিজড়িত করেছেন তাকে/আজকে মানুষ আমি তবুও তো সৃষ্টির-হৃদয়ে/ হৈমন্তি—ক স্পন্দনের পথের ফসল।’ (জীবনানন্দ দাশ)
বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্রের দাশ। এত বৈচিত্রময় দেশ বিশ্বে বিরল। এখানে কবিরা বুঝতে পারে ঋতুর চলাফেরা। ফলে কবি মনে জেগে উঠে প্রেম-বিরহ-আনন্দ-ভালবাসা। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় পাওয়া যায় বৌদ্ধ দর্শনের চেতনা। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- প্রতিটা দিন পবিত্র। তেমনি প্রতিটি পূর্ণিমা বহন করে গৌতম বুদ্ধের স্মৃতি। বৌদ্ধ ধর্মে পূর্ণিমার অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মে কোন কোন স্মৃতি বা ঘটনা এসব পূর্ণিমা তিথিকে দিয়েছে অন্যমাত্রা। অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমায় উপাসক-উপাসিকারা অষ্টশীলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বুদ্ধের স্মৃতি শরণ করেন। কিয়াংয়ে ভান্তেগণ নিবিষ্ট চিত্তে ধর্মপ্রাণ গৃহীদের উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা করেন এই তিথির গুরুত্ব। অগ্রহায়ণ মাসেই মহা পরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন গৌতম বুদ্ধের শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম মহাঋদ্ধিমান অগ্রশ্রাবক মৌদ্গল্যায়ন স্থবির। গৌতম বুদ্ধের দুই অগ্রশ্রাবক। সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন। ঋদ্ধিশ্রেষ্ঠ মৌদ্গল্যায়নের নখ-দর্পণে ছিল দেবলোক ও ব্রহ্মালোক। অগ্রহায়ণ মাসের অমবস্যায় তিনি পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হোন বেণুবণ উদ্যানে।
ভান্তেুু বলতে লাগলেন-“স্থবির মৌদ্গল্যায়ন বুদ্ধকে বন্দনা করে চললেনে সপ্তপর্ণী গুহায়। ধ্যানের উদ্দেশ্যে। গুহায় তিনি যখন গভীর ধ্যানে উপবিষ্ট হলে তখন তাঁর প্রতি রুষ্ট হয়ে বিধর্মীরা হিংসাবশতঃ একজন ঘাতক পাঠালেন স্থবিরকে হত্যা করার জন্য। স্থবির মৌদ্গল্যায়ন সব জানতেন। ঘাতক বিরাট এক লৌহদ- নিয়ে তাঁকে মারতে এলে প্রথম ও দ্বিতীয় দিন ঋদ্ধিবলে অদৃশ্য হয়ে যান। তৃতীয় দিনে তিনি বুঝতে পারলেন অতীত কর্মের ফল তাঁকে ভোগ করতে হবে। অতীত জন্মে যেহেতু তিনি মা-বাবাকে কষ্ট দিয়েছিলেন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ও পাথর ছুঁড়ে। তার ফল এত বড় ঋদ্ধিমান মৌদ্গল্যায়ানকেও ভুগতে হচ্ছে। কর্মফল থেকে আমরা কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারবো না। স্বয়ং ত্রিকালদর্শী মানবশ্রেষ্ঠ গৌতম বুদ্ধকেও কর্মফল ভোগ করতে হয়েছে। তো তৃতীয় দিনে ঘাতক ধ্যানাবস্থায় স্থবির মৌদ্গল্যায়নকে পেছন থেকে আঘাত করলে স্থবিরের শরীরে হাড্ডি চূর্ণ হয়ে মৃত্যু হয়। তারপর তিনি ঋদ্ধিবলে শরীর জোড়া দিয়ে চললেন গৌতম ব্ুেদ্ধর কাছে।