সৎ নেতৃত্বের প্রশ্নে বিশ্বনন্দিত প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় গর্বিত বাংলাদেশ
মানিক লাল ঘোষ : সততার আজ বড়ই অভাব, ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়। ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন কমে যাচ্ছে সৎ মানুষের প্রতিচ্ছবি, তেমনি অভাব দেখা যাচ্ছেÑ রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও। পৃথিবীব্যাপী মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, ক্ষমতা ও দুর্নীতি শব্দ দুটি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের নামে গণমাধ্যমে উঠে আসছে দুর্নীতির অভিযোগ। নিজ জন্মভূমি থেকে অর্থ পাচার করা কিংবা কর ফাঁকির স্বর্ণরাজ্য হিসেবে পরিচিত অফশোর ব্যাংক ও কোম্পানিতে টাকা জমা করা অভিযোগ উঠছে হরহামেশা।
কিছুদিন আগে প্যারাডাইস পেপারসে বিভিন্ন দেশের দূর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে ওই দেশেগুলোর সরকার প্রধানকে এর মাশুল দিতে হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মতো অনেককে বিদায় নিতে হয়েছে ক্ষমতায় থেকেও। এমনই সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্থাপিত দৃষ্টান্ত পুরো বাঙালি জাতিকে করেছে গর্বিত।
সম্প্রতি পিপলস এ্যান্ড পলিটিকস নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কর্মকা- বিশ্লেষণ করে সৎ নেতৃত্বের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তাতে ৩ নম্বরের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৮৭ নম্বর প্রথমস্থানে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেঁলা মার্কেল পেয়েছেন ৯০ এবং ৮৮ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হুমিয়েন লুং। এতে চতুর্থস্থানে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরানা সোলবার্গ ৮৫ নম্বর এবং পঞ্চম স্থানে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ৮১ নম্বর। মাত্র ১০ নম্বরের মধ্যে ৫ জনের অবস্থান। প্রথমস্থান অর্জনকারী সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যবধান মান মাত্র তিন নম্বরের।
যদিও শেখ হাসিনা সরকারের অনেক মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে কিন্তু সততার তালিকায় তার এই অর্জন শুধুই ব্যক্তিগত এবং অতুলনীয়। এজন্য তিনি যতটা গর্বিত তার চেয়ে বেশি গর্বিত বাঙালি জাতি। কারণ তার ধমনীতে প্রবাহিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত, যিনি ছিলেন বাঙালির মুক্তির ঠিকানা।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় একটি দেশের উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রা নির্ভর করে ওই দেশটির যোগ্য নেতৃত্বের উপর। নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তির সততা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্য নিষ্ঠা আর সর্বোপরি তার দেশপ্রেমের উপর। দেশ স্বাধীন হবার ৪৬ বছরেও উন্নয়নের সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে এখনো পৌছাতে পারিনি আমরা। কারণ শুধু একটাই যোগ্য ও সৎ নেতৃত্বের অভাব।
দুর্নীতি প্রতিরোধে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাথা যখন ঠিক আছে তখন শরীরের অন্যান্য জায়গায় যেটুকু ঘা আছে, তা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশ্বাসে আস্থা আছে আমাদেরও। আমরাও চাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেভাবে জিরো টলারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান তেমনি এর পাশাপাশি একইভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অবস্থান নিবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
সম্প্রতি দলের সংসদীয় কমিটির এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন কাউকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিবে না তার দল। তার এই দৃঢ় প্রত্যয় স্বাগত জানিয়ে বলতে চাই সরকার প্রশাসন এবং দল থেকে দুর্নীতি দূর হলে এর প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে। দলমত নির্বিশেষে সকল ক্ষমতাবান দূর্নীতিবাজদের শক্ত হাতে দমন করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করাও এখন সময়ের দাবি।
শুধু ব্যক্তি অর্জনে আত্মতুষ্টি নয়, শেখ হাসিনার যোগ্য, সাহসী ও সৎ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে দুর্নীতি নামক শব্দটি এই প্রত্যাশা দেশবাসীর। আমরা চাই তৃতীয় নয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখে সততার শীর্ষে থাকবেন আর দেশবাসীকে নিয়ে যাবেন আত্মসম্মানবোধের বিশাল উচ্চতায়।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা
সম্পাদনা: আশিক রহমান