মহান মুজিবের ত্যাগ এবং বর্তমান রাজনীতির হালচাল
রবিউল আলম : মাটির সঙ্গে সম্পর্ক নেই, মানুষ গড়ার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নেই, শুধু দলের পরিচয় ও মার্কা নিয়ে রাজনীতির মাঠে। বাড়িভাড়া নিয়ে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে বৈতরণী পার। জয়লাভ করে এলাকার জনগণের নিকট থেকে পালিয়ে থাকার লক্ষ্যে আত্মগোপনে থাকা নেতার নাম দেওয়া হয় মাটি ও মানুষের নেতা, মানুষ গড়ার কারিগর। নেতার চরিত্র ও কার্যকলাপ দেখে হতাশ না হয়ে কি আর উপায় আছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলে এই প্রকৃতির নেতা আছেন। দলের রাজনীতি করুক আর নাই করুক টাকার জোরে নমিনেশন আদায় করায় পারদর্শী। তার এলাকা কোথায়, মাটির সঙ্গে তার কী ধরনের সম্পর্ক। সমাজ উন্নয়ন করলে নিজ ও দেশের উন্নয়ন হবে। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন হলে, সম্পর্ক রাখতে পারলে নির্বাচনের অর্ধেক কাজ এগিয়ে রাখা যায়, জনগণ একবার আপনাকে গ্রহণ করলে ভোট আর চাইতে হবে না, একথা বোঝার মতো জ্ঞানবুদ্ধি অর্জন না করেই মাটি ও মানুষের নেতা হওয়া যায় না। বাংলার মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাঠে-ঘাটে, কৃষকের বাড়িতে, শ্রমিকের কাধে হাত রেখে বাংলার মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন। বাংলার স্বাধীনতা, বাঙালির অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে মুজিবুরের জন্ম হলেও পিতা লুৎফর রহমান মানুষের জন্য শেখ মুজিবকে গড়ে তুলেন। শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়াতে, মানুষের সেবায় নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করেন। কখনো পিতা-মাতার আদর, শাসন বাধা হতে পারেনি। শত ব্যথা, আশা-আকাঙ্খা বুকে চেপে রেখে খোকাকে এগিয়ে চলার সাহস জুগিয়েছেন। জীবনসঙ্গী গ্রহণ করেও জীবন ধারণের কোনো পরিবর্তন করেননি মুজিব। এমনকি সন্তানদের টানেও বাংলার মানুষের কাছ থেকে শেখ মুজিবকে আলাদা করতে পারেনি।
জীবন ভোগের বিষয় ন্যায়, ত্যাগেরÑ এই একটি কথা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সারাজীবন বুঝিয়েছেন। মাটি ও মানুষের নেতা হতে হলে মাটির সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে, মানুষ গড়ার কারিগর হতে চাইলে আগে নিজে মানুষ হতে হবে। শিক্ষা অর্জন করতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য প্রেম থাকতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের স্থায়িত্ব, আঞ্চলিকতা, দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা না করে মনোনয়ন দিলে প্রশ্ন থাকবে জনগণের মধ্যে। সারা বাংলাদেশের নেতাদের সম্পর্কে আমার জানার কথা নয়।
৫৩ বছর দেখছি, ২৩ বছর সঙ্গে চলেছি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. সাদেক খানের সঙ্গে। পিতা মো. মেকাব খানের ৯ সন্তানের মধ্যে পঞ্চম, মায়ের প্রিয় সন্তানের তালিকায় সাদেক খানের নাম ছিল সবার উপরে। ১৯৭৭ সালে সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়েও সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৯৪ সালে কমিশনার হয়ে কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও টেন্ডার কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঐতিহাসিক জনতার মঞ্চের প্রতিষ্ঠার কারিগরিক দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদপুরের অপ্রতিরোধ্য নেতা হয়েও দলের স্বার্থে, নেত্রীর নির্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নাননককে বুকে ধারন করে নেন। অর্থ-প্রচার সহ একটি নির্বাচনে জয়ী হতে যা প্রয়োজন সব কিছুর দায়িত্ব পালন করেছেন সাদেক খান। মাটিতে বসতে পারে, মানুষকে সম্মান করে ঢাকা জয় করে নিয়েছে। দলের বিশ্বাস অর্জন করে আজ নেতৃত্বের আসনে। তবুও কোন আশা-আকাঙ্খা নেই, নেত্রী ছাড়া বলার কিছু নেই। সময় হলে আত্মজীবনী প্রকাশ করা হবে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার আগে বিবেচনা করতে হবে। মাটির সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা, দলের দায়িত্ব পালন করেছে কিনা, কর্মীদের কাছে নিয়েছিল কিনা, মানুষ ও দেশ গড়ার শিক্ষা ও ইচ্ছা আছে কিনা তা দেখতে হবে। প্রশ্ন হাজারো থাকতে পারে, সমাধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিবেন। দলের প্রতি আস্থা থাকলে, বিরোধী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাটি ও মানুষের নেতা, মানুষ গড়ার কারিগর নির্ধারণ করতে হবে। ভোট নিয়ে পালিয়ে থাকা নেতা জনগণ চায় না।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : আশিক রহমান