মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
মহা শক্তিধর আল্লাহ। বিশাল তার জ্ঞান। তুলনা নেই সে জ্ঞানের। তার ক্ষমতারও সীমা নেই। সীমা নেই তার কুদরত আর হেকমতের, যা শেষ করে যায় না বলে। শেষ করা যায় না লেখে। সেই মহান রাব্বুল আলামিন বললেন, ‘হও!’ অমনি হয়ে গেলো। পানি হলো। মাটি হলো। বাতাস হলো। আগুন হলো। হলো পৃথিবী, আকাশ, মহাকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য, সৌরজগত। আরও হলো নদ-নদী, সমুদ্র-সাগর, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, তৃণলতা, ফল-ফুল, জীব-জানোয়ার পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ আরও কত কি! জানা-অজানা যা কিছু দরকার সব হলো। মহান আল্লাহ হঠাৎ একদিন ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি। তারা হবে আমার প্রতিনিধি। তারাই আমার গুণের প্রকাশ ঘটাবে। গুণগান করবে। সমস্ত সৃষ্টির ওপর আমার খলিফা হবে। প্রতিনিধিত্ব করবে।’ তিনি আদমকে সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন প্রথম মানুষকে। তাকে পৃথিবীর সব কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন। এরপর সকল ফেরেশতাদের ডাকলেন। বললেন, ‘এই সমস্ত সৃষ্টির নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ ফেরেশতারা মাজুর হালতে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি মহান পবিত্র। আপনিই সর্বজ্ঞানী। আমরা কী করে এসবের নাম বলবো। আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন, তার বেশি কিছু জানি না। আপনিই সব জানেন।’ এবার আল্লাহ তায়ালা আদমকে বললেন, ‘হে আদম! তুমি এসবের নাম বলে দাও।’ আদম (আ.) ফেরেশতাদের সব জিনিসের নাম বলে দিলেন। ফেরেশতারা নত হলো। আপন ভুল স্বীকার করলো। আদম (আ.) একা। কিন্তু একা কি মানুষ থাকতে পারে? আল্লাহ তায়ালা তার জন্য হাওয়াকে সৃজন করলেন। এরপর মহামহিম রাব্বুল আলামিন বললেন, ‘যাও, তোমরা জান্নাতে বসবাস করো। যেখানে ইচ্ছা, সেখানে চলা-ফেরা করো কোনো বাধা নেই, তবে এই গাছের কাছে তোমরা যেও না। এ গাছের ফল তোমরা খেয়ো না। এটা আমার আদেশ, এটাই আমার নিষেধ।
আদম-হাওয়া মহাসুখে দিন কাটাতে লাগলেন। বেহেশতের অনন্তর অসীম-নেয়ামত ভোগ করতে লাগলেন। আদমের চিরশত্রু ইবলিস। তার সহ্য হলো না এসব। শয়তান ইবলিস পরামর্শ দিলো হাওয়াকে ফল খেতে। ফলের স্বাদ নিতে। কোন ফল? আল্লাহ নিষেধ করেছিলেন যে গাছের ফল খেতে সেই গাছের ফল। আদম-হাওয়া বুঝতে পারলেন না আজাজিলের ছলনা। শয়তানের জয় হলো। তার শঠ্তায় সেই নিষিদ্ধ ফল খেলেন। ফল খেয়ে উভয়ে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হলেন। আল্লাহ তাদের ওপর নারাজ হলেন। ইবলিস ভীষণ খুশি। তার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। পূরণ হয়েছে তার কৌশল। মহান রাব্বুল আলামিন বললেন, তোমাদের জন্য এই জান্নাত নয়, তোমাদের জায়গা এখন থেকে পৃথিবী।
আর পৃথিবীতে যাত্রা হলো মানুষের। শুরু হলো মানুষ ও শয়তানের চিরন্তন সংগ্রাম। মানুষ ও শয়তানের ময়দান এই পৃথিবী। শুরু থেকে শেষ অবধি এ যুদ্ধ চলছে, চলবে এবং চলতে থাকবে। রণক্ষেত্রে শয়তানকে পরাস্ত করেই মানুষ মহামহিম রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন করবে। আর ফিরে পাবে হারানো সেই জান্নাত, আনন্দময় সেই মহাসুখ।
লেখক: শিক্ষক, বাইতুন নূর মাদরাসা, ঢাকা।