এসব অজুহাত দেখার কেউ নেইরাজেকুজ্জামান রতন
দ্রব্যমূল্যের বাজার লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে চলেছে। মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও মূল্য কমছে না বরং বাড়ছে। এর পিছনে একদিকে সরকারের দায়িত্বহীনতা বা নজরদারীর অভাব, আরেকদিকে ব্যবসায়িক অসৎ নীতি প্রধানতঃ দায়ী। যেমন: পিয়াজের দাম এখন ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশে বার্ষিক পিয়াজের চাহিদা ২২ লক্ষ টন। সরকার বলেছে, গত বছর আমাদের এখানে ১৮ লক্ষ টন পিয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এবং আগস্ট মাস পর্যন্ত ৭ লক্ষ টন পিয়াজ আমাদানি করা হয়েছে। তাহলে সেই অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় ৩ লক্ষ টন পিয়াজ আমাদের এখানে মজুদ থাকার কথা। এই সময়ে কি অজুহাতে পিয়াজের দাম এতোটা বৃদ্ধি পেয়েছে? এক্ষেত্রে পিয়াজের দাম বৃদ্ধির পিছনে একটা হল, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট, আরেকটা হল পিয়াজের বর্ধিত দাম দেখিয়ে এলসি খুলে বিদেশে টাকা পাচারের একটা কৌশল এটা হতে পারে। সেই কারণে আমরা দেখেছি যে, একমাসে পিয়াজের দাম ৪০ টাকা থেকে এক লাফে বেড়ে ৮০-৯০ টাকা বিক্রি করে থাকে। তাহলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে এক মাসে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা তারা নিয়ে গেলো দাম বৃদ্ধির অজুহাতে। এসব অজুহাত দেখার কেউ নেই। সরকারের কি এমন কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা মন্ত্রণালয় নেই যে, তারা এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে একটা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে।
পরিচিতি : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ : লিয়ন মীর / সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
বা ংলাদেশমুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে এক মাইলফলক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। কিন্তু বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা ছিল দীর্ঘ দিনের সংগ্রামের ফসল। বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন, শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দৃঢ় আশা ব্যক্ত করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাক-হায়েনারা ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে অনেক বাঙালিকে হত্যা করে। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চের রাত্রিতে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু তার ঐ ঘোষণা সাধারণ মানুষ শুনতে পায়নি। পরদিন ২৬ মার্চ তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বাঙালিরা উক্ত ঘোষণা শুনে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালে বাঙালিরা পাকবাহিনীকে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে রুখে দাঁড়ায়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচয় লাভ করে। সুতরাং এই অবিস্মরণীয় মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক গুরুত্ব অত্যধিক।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে মাধ্যমেই বাঙালিরা বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাক-শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং সর্বশক্তি দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৭১ সালে বাঙালিরা পাক-বাহিনীকে গেরিলা যুদ্ধেও মাধ্যমে রুখে দাঁড়ায়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের দরবারে পরিচয় লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বর্বর হামলা করে অনেক বাঙালিকে হত্যা করে। ২৫ মার্চের রাত্রিতে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু তার ঐ ঘোষণা সারা দেশের মানুষ শুনতে পান নাই। পরের দিন ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাঙালি উক্ত ঘোষণা শুনে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ একত্রিত হয়ে মেহেরপুর জেলার ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলা আ¤্রকাননে (মুজিবনগরে) বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৩ এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি যুদ্ধ কেবিনেট (ডধৎ ঈধনরহবঃ) গঠন করা হয়। তারপর ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার (ইধহমষধফবংয এড়াবৎহসবহঃ-রহ-ঊীরষব) আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকসহ সকল স্তরের মানুষ এবং রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি (মনি সিং), ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (ভাসানী)সহ কতিপয় বাম রাজনৈতিক দলও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। এখানে উল্লেখ্য যে, কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। বাংলার আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস ব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাঙালিরা একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মর্যাদা পেয়েছি। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। পৃথিবীর কোনো জাতি তাদের ভাষার জন্য এবং স্বাধীনতার জন্য এত প্রাণ দেয়নি, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করে। ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এ স্বাধীনতা। শুধু এ উপমহাদেশে নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে এক মাইলফলক এবং এ দেশের জন্য এই যুদ্ধের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।
লেখক : উপ-মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুর
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ