সরকার গুম করছে না : এইচ টি ইমাম
ফারমিনা তাসলিম : বাংলাদেশে গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আটকের বহু অভিযোগ পাওয়া যায়। সরকার নিখোঁজের এ ব্যাপারটা ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না কারণ যারা গুম হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকই সরকারের সমালোচকও রয়েছেন। সরকারের এমন অবস্থানের কারণ কী এ প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, যেভাবে পর্যালোচনাটি শুনলাম এবং আঙ্গুল দেখিয়ে বলা হচ্ছে সরকারের। আমি ঠিক ওই ভাবে মনে করি না। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যাপার নয়, এখানে সামাজিক, অর্থনৈতিক অনেক কিছু আছে। আমরা যদি অন্যান্য দেশগুলোর দিকে দেখি তাহলে ইসরায়েলে ব্যাপকহারে অন্তর্ধান হয়। আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্রে বছরে কয়েক লাখ মানুষ বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।
বাংলাদেশও কি ওই দেশগুলোর পর্যায়ে চলে যাবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, মোটেও না। সে তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। সবধরণের গুমে সরকারি বাহিনী জড়িত তা নয় এবং সরকারও গুম করছে না। আমি অনেকের কথা জানি যারা ব্যাংক ক্রাফসী হয়ে যাচ্ছেন তারা নিজেরাই হঠাৎ অন্তর্ধান হয়ে যান।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে অনেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অনেক মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন প্রসঙ্গে এইচ টি ইমাম বলেন, ভুয়া র্যাব, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি অপরাধী চক্র আছে। এরা অনেকেই অপরাধ করছে। এ পর্যন্ত শুধু র্যাবই ৪৩২ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের এবং এগুলোকে যদি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয় তাহলে অন্যান্য যারা আছেন তারা একটু সংযত হবে।
এ গুম প্রসঙ্গে বিবিসির আরেকটি অনুষ্ঠানে আপনি আগেও বলেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা অর্থাৎ যারা রক্ষক তারা যাতে এ ধরণের কাজ করতে না পারে সেটা প্রতিরোধ করা সরকারের কাজ আসলে তারা কাজটা কতটুকু করা গেছে কারণ অভিযোগ তো এখনো আসছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, নিশ্চয়ই আমি কিন্তু ওই নীতি থেকে একটুও বিচ্যুত হচ্ছি না। সবগুলো সংস্থারই দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। আবার এটিও র্যাবেরই দায়িত্ব কেউ যদি অন্যায় করে তাদেরকে সংযত করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা এ কাজটি করতে গিয়ে হয়তো সীমা রেখাটা শুষ্ক।
যারা ফিরে আসছে তারা কেউ কথা বলছে না তারা আসলে এতই আতংঙ্কিত। এ আতঙ্ক তাদের ভিতরে, তার মানে আসলে তাদেরকে এত ক্ষমতাবানরা নিয়ে যাচ্ছে এর পর তারা ফিরে এসে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। সেটি সরকার কেন বের করতে পারছে না?
এমন জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, আমার মনে হয় না এত ক্ষমতাবান কেউ আছেন ধরে নিচ্ছি তারা ভিক্টিম। কিন্তু তারা সত্যি সত্যি ভিক্টিম হওয়ার পিছনে অন্য কোন কারণ আছে কিনা বা তাদের অতীত কি আমরা জানি?
এ বিষয়টা তদন্ত করে আসলে কী ঘটেছে সেক্ষেত্রে একটা কমিশন করার পরামর্শ একটা সুপারিশ সে ধরণের একটা বিষয়ে কি সরকার চিন্তা ভাবনা করতে পারে না?
এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, সরকার চিন্তা ভাবনা করতে পারে। আমার মনে হয় অন্য কমিশন করার চাইতে আমাদের হিউম্যান রাইটস কমিশনই আছে। যেটি সাংবিধানিক একটা প্রতিষ্ঠান। ইনফরমেশন কমিশনও আছে। সরকারের কোন বাহিনী হয়তো গুম করছে। এক্ষেত্রে তো সরকারের ওপর একটা অভিযোগ আসছে?
এমন প্রসঙ্গে এইচ টি ইমাম বলেন, আমার আপত্তি হচ্ছে এখানে এটা সরকারের নয়। এ কারণগুলো যদি এভাবে দেখেন তাহলে অনেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর আত্মগোপন করে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক কু-লের জের ধরে নিখোঁজ বা গুমের ঘটনা ঘটে। অনেকেই রাজনৈতিক স্বার্থ চরিত্রতার্থ করার জন্য এমন করেন।
শুরু দিকে বলা হয়েছিল তাদের সাথে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা । কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষক এবং এমনকি সাবেক কূটনৈতিক পর্যন্ত গুম হয়ে যাচ্ছে। তাই অনেকেই আশা করছে এখনই যদি কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে আরো অনেক মানুষ ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবেন। আপনি নিজেও একজন রাজনীতিবীদ কী বলবেন এ ব্যাপারে? এখনো কি সময় আসেনি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখে একটা ব্যবস্থা নেয়া?
এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, অবশ্যই সবসময় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বাংলাদেশের যত সংস্থা আছে তারা এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। কিন্তু এ বিষয়গুলোকে খতিয়ে দেখা বা তথ্য অনুসন্ধান করা সরকার এবং তার এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব পালন করবে। তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাামজিক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির যারা আছেন, তারাও সমাজে রীতিমত দায়িত্ব পালন করবে। সূত্র – বিবিসি বাংলা