অঞ্জন রায় : যখন মধুসুদন ধরের টাটকা লাশের রক্ত স্পর্শ করে মৌলানা কসিমউদ্দীনের রক্ত। যখন নুজহাত চৌধুরীর কাছে বাবা মানে একটা রক্ত মাথা জামা। যখন বাপ্পা মজুমদারের গিটারটাই হয়ে ওঠে হারিয়ে যাওয়া বোন মধুমিতার হাত। শমী কায়সার যখন ৮ বছর বয়সে নৌকা আঁকার অপরাধে অভিযুক্ত হয়। যখন জয়ন্ত রায়ের একটা চোখ কুকুরের খাবার। তখনই আমরা একই মাতৃগর্ভের উত্তাপে ওম নেই- আমাদের কষ্টগুলো এক হয়ে যায়। আমরা সাহসী হই- এতোটাই সাহস- ভয় আমাদের সামনে আসতে এখন ভয় পায়। আর তখনই বুঝি- বিজয় আনতে কতটা দাম দিতে হয়?
পৃথিবীর কোন দেশে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি এতো দ্রুত রাজনীতিতে পূনর্বাসিত হয়নি। কোন দেশেই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা এতো সহজে প্রধানমন্ত্রী অথবা মন্ত্রী হয়নি। এমনকি কোন দেশেই তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিপক্ষকে নিছক ক্ষমতার জন্য রাজনৈতিক ভাবে কাছে টেনে নেয়া অথবা যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময়ে নির্লিপ্ত থেকে কোন বিচারিক রায়ের প্রতিক্রিয়া না জানানোর ঘটনা ঘটেনি। অথবা কোন দেশেই ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ- তাদের মুক্ত করে দেয়া হয়নি। পরাজিত দেশের আতœসমর্পনের স্থানটিকে পাল্টে দেয়ার জন্য বানানো হয়নি কোন পার্ক। আর সবচে বিস্ময়কর হলো কোন দেশের ইতিহাসের স্বাধীনতার স্থপতিকে এতাটা অপমান করার সাহস দেখায়নি কেউ। সত্যিই ‘বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্বাধীনতা বিরোধী এবং তাদের ভাবাদর্শের লোকগুলোর জন্য কখনোই রঙ বদলে মিশে যাওয়ার স্থানের অভাব হবে না। এই গিরগিটিগুলোর জন্য যেমন রং বদল সহজ, তেমনই এদের বরণ করে নেয়ার জন্য স্থানের অভাব নাই। আরো সত্য হলো- বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সবচে বেশি পরিমান স্বাধীনতা বিরোধী এবং তাদের ভাবাদর্শের লোকগুলো কাজ করছে। আমরা যাদের বন্ধু হিসাবে বুকে টেনে নিয়ে বরণ করছি- তাদের লুকোনো ছুরিতেই আমাদের মৃত্যু হবে।
সাড়ে চার দশকের শেকল ছেড়ার নিরন্তন লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত বিজয় হবে তাদেরই উত্তরাধীকারের- যাদের ধমনীর প্রবাহমান রক্তে ৫০, ৫২, ৬২, ৬৯, ৭১, ৯০ প্রবাহমান। যাদের লড়ই কখনো শেষ হয় না, তারা মিশে থাকে মাটিতে পিপড়া আর জলে মাছের মতোন- এখনো রক্তজবার মতোন ক্ষত তাদের পিঠে, তাদের করতলে এখনো মাটির গন্ধ লেগে।
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক/ ফেসবুক থেকে