দীর্ঘদিনের আতঙ্ক ভেঙ্গে ১৭ ডিসেম্বর যে সূর্যোদয়টি ছিল, সেই সূর্যটি আমাদের কাছে নতুন জন্মের মনে হয়েছিল। কারণ, অবরুদ্ধ বাংলাদেশে আট মাস ২১ দিনের যুদ্ধের পরে সূর্যটাকে অনেক জ্বলজ্বলে মনে হয়েছিল আমার কাছে। একটা মুক্তির স্বাদ পেয়েছিলাম। আমি শুধু নয়, সেদিন ঢাকা শহরে বেরিয়ে যা দেখেছি, দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করছে। সেই আনন্দটা অবরুদ্ধ ছিল। কাজেই ১৭ ডিসেম্বর থেকে মনে হয়েছিল, আমাদের পরম কাঙ্খিত যা কিছু তার সবকিছু পেয়ে গেছি। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠা মানুষের হাস্যজ্জল মুখ এবং আনন্দ উল্লাসের যে চিত্র বা দৃশ্যপট দেখেছি, সেদিনটিকে কোনো দিন তা ভুলবো না। প্রতিটি বিজয় দিবস এলেই সেই প্রথম বিজয়ের দিনটি আমার মনে পড়ে। এখন মানুষ আনন্দ করে উল্লাসও করে, তবে একাত্তরের বিজয় দিবসের কাছে তুলনামূলকভাবে আজকের আনন্দ উল্লাস অনেকটা ¤্রয়িমান। কারণ, আমরা বিজয় প্রত্যক্ষ করেছি, আবার বিজয় দিবস প্রত্যক্ষ করেছি। শুরুতে ২৫ শে মার্চ রাতেই শহিদ মিনার ধ্বংস করা হয়েছিল কামানের গুলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ও জগন্নাথ হল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। এর বাইরে তেমন একটা দেখতে পারিনি। তবে পিলখানা এবং রাজার বাগের আক্রমনের ধরন ভিন্ন ছিল। গোটা দেশ যেভাবে ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল, সে তুলনায় ঢাকায় অতটা ধংসযজ্ঞ হতে পারেনি। কারণ, যে পরিমান যুদ্ধ হবার কথা ছিল, তা হবার আগেই হানাদার বাহিনী আতœসমর্পন করেছিল। ঢাকা শহরের মানুষ আতঙ্কিত ছিল। আতঙ্কের একটা বদ্ধ নগরিতে রূপান্তরিত হয়েছিল ঢাকা শহর। সেই আতঙ্কের সমাধি ঘটেছিল ১৭ ডিসেম্বর। আনন্দ উল্লাসে মেতেছিল সকল মানুষ।
পরিচিতি : ইতিহাসবিদ
মতামত গ্রহণ : লিয়ন মীর /সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ