বিএনপি’র বর্জন: আইইবি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক দু’পক্ষ মুখোমুখি
জয়ন্ত আচার্য
প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের (আইইবি) নির্বাচনে নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রকৌশলীদের দুই পক্ষ। অগ্রিম স্বাক্ষরকৃত মনোনয়ন প্রত্যাহারপত্র ব্যবহার করে একপক্ষ আরেকপক্ষকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি গড়িয়েছে উচ্চ আদালতে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত প্রকৌশলীদের মধ্যে ভীতি ও বিব্রত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিকে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না এমন অভিযোগ তুলে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি সমর্থক সংগঠন অ্যাসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) । তামাসা ও ভোট দখলের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা আবারও আইইবি-কে দখলে নিচ্ছে এমন অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয় আ্যব।
আগামী ২১ ডিসেম্বর আইইবি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল গত ১৬ অক্টোবর। নির্ধারিত তারিখে আওয়ামীপন্থী প্রকৌশলীরা মনোনয়ন জমা পড়ে। রীতি অনুসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ অনুসারে একটি প্যানেল হবে বলে জানানো হয় । একটি প্যানেল করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের কাছে অনেকে প্রত্যাহার পত্র জমা দিয়ে রাখে। জানা গেছে বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাব নির্বাচন বর্জন করায়, আলোচনা ছাড়াই আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং আইইবির বর্তমান মহাসচিব আবদুস সবুর তার সমর্থকদের নিয়ে একটি প্যানেল ঘোষণা দেন। এ প্যানেলের মহাসচিব পদে খন্দকার মঞ্জুর মোশেদের নাম ঘোষণা করা হয় । অভিযোগ রয়েছে, আগের স্বাক্ষর করা প্রত্যাহার পত্র জমা দিয়ে বাকিদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে বুয়েটের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে সভাপতি, মহাসচিব পদে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন একটি প্যানেল ঘোষণা দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রকৌশলীরা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ এবং বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীরা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব) ব্যানারে আইইবি নির্বাচনে অংশ নেন। প্রার্থিতা করতে গেলে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনও দিয়ে রাখতে হয় দলীয় সংগঠনের কাছে। যাতে একই সংগঠন থেকে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিন্দ্বিদ্বতা না করে। সংগঠনের নিয়ম মেনেই আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রকৌশলীরা সবাই মিলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সঙ্গে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনও জমা দেন। কিন্তু বিএনপি সমর্থকরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তারা সংগঠনকে চিঠি দিয়ে জানান, তাদের আবেদনপত্র প্রত্যাহারের আবেদনটি আর কার্যকর হবে না। তারা সকলে নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সবুর প্যানেল প্রভাব খাটিয়ে নজরুল ইসলাম গ্রুপকে বাদ দিয়েই আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেল ঘোষণা দেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুস সবুর বলেন, আমিও নির্বাচনে প্রতিন্দ্বিদ্বতা চাই।
নজরুল ইসলাম গ্রুপ হাইকোর্ট ২১ ডিসেম্বরের আগেই আইইবির নির্বাচন স্থগিত করে রায় দিবে বলে আশা করছে । সূত্র জানায়, আইইবির নির্বাচন দুইটি প্যানেল হওয়ায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড।
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আইইবি দেশের সকল প্রকৌশলীদের পেশাদার সংগঠন। সংগঠনটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠানও। অতীতে আইইবির সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচিব, অধ্যাপক, প্রধান প্রকৌশলীদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন ব্যক্তিদের বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হচ্ছে। একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে আইইবির কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন হওয়া প্রয়োজন । তানা হলে খারাপ দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হবে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আরেকটি প্যানেলের মহাসচিব প্রার্থী পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ হোসাইন বলেন, পরাজিত হবে বলে বিএনপিপন্থীরা নির্বাচনে আসেনি। এখন আমরা যারা নির্বাচন করছি তারা সকলেই একই আদর্শে বিশ্বাসী। আমাদের মধ্যে একটি সুস্থ নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হলে তা সংগঠনের জন্যই ভালো। কে কতটুকু জনপ্রিয় ও দক্ষ তাও যাচাই করা যাবে।
উল্লেখ্য সারা দেশের প্রায় ৫০ হাজার প্রকৌশলী আইইবির সদস্য ।