স্বাধীনতার স্বাধীনতা কতটুকু
মু. ইলিয়াস আলমগীর
স্বাধীনতা এক ঐশ্বরিক তৃপ্তির নাম! স্বাধীনতা যে কত বড় গৌরবের নাম এটা গভীরভাবে শুধু তারাই জানে যারা আমৃত্যু পরাধীনতার নাগপাশে বন্দী! যারা স্বাধীনভাবে এক ভোরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য সবকিছু উৎসর্গ করতে প্রস্তুত তারাই জানে স্বাধীনতার গুরুত্ব কতটুকু! যারা পরাধীন, শুধু একটু মুক্ত বিহঙ্গের মতো ওড়বে বলে,সুর ছেড়ে গাইবে বলে,মনের কথাগুলো বলবে বলে তাদের জীবনের একরৈখিক স্বপ্ন হচ্ছে স্বাধীনতা অর্জন! ধন সম্পদ, পরিবার, নিকটাত্মীয়, বহুপ্রাণের সামনেও তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে অটল অবিচল থাকে! ধ্বংসস্তূপ কাধেই সহ¯্রমাইল চলার প্রত্যয় থাকে তাদের বুকে শুধু স্বাধীনতার স্বপ্নে! বলি কি, এই স্বাধীনতা অর্জন করলেই কি যা মনে চায় তাই করা যায়?মুখে যা আসে তাই বলা যায়? কলমের ডগা ইচ্ছামতো চালানো যায়?স্বাধীনতা মানে কি স্বেচ্ছাচারিতা? বাংলাদেশের সংবিধানে ছত্রিশ থেকে একচল্লিশ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কথা বিধৃত হয়েছে! ওখানে মানুষের চলাফেরা, সমাবেশ করা, সংগঠন, পেশা, ধর্ম, চিন্তা ও বিবেক এবং বাক স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে! সংবিধানের এ অংশের পাঠোদ্ধার যা বলে তা থেকে একথা সংশয়হীন বলা যায় যে,উল্লিখিত ক্ষেত্রে মানুষের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ নয়! এসব ক্ষেত্রে স্বাধীনতা উপভোগের একটা সূক্ষ্ম হীরক সীমা রয়েছে! এবং উপভোগকারীকে এসব স্বাধীনতা ভোগ করার একটা চৌহদ্দি নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সংবিধান! চোহদ্দীর বাইরে এসব স্বাধীনতার ব্যবহার বা উপভোগ অবৈধ! কোন কোন ক্ষেত্রে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেও দেখা যায়! সহসাই এখন যে প্রশ্নটা আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায় সেটা হচ্ছে ব্যক্তির চৌহদ্দি কতটুকু?এর উত্তরে সাধারণভাবে বলা যায়, অন্যের অধিকারে আঘাত দেওয়ার আগ পর্যন্ত কোন ব্যক্তির স্বাধীনতা ভোগ করার বৈধ চৌহদ্দি! অন্যকোন ব্যক্তি বলতে প্রকৃত কিংবা কৃত্তিম দুটোই অন্তর্ভূক্ত! সুতরাং কারো স্বাধীনতা ভোগ করাটা যদি কোনভাবে অন্যের স্বীকৃত অধিকারকে সামান্যও আঘাত করে তবে সেটা স্বেচ্ছাচারিতা বলে বিবেচিত হবে!বিষয়টাকে আরো স্বচ্ছ করার জন্য আমরা জর্জ বার্নাড শ’য়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করতে পারি! কোন একদিন শয়ের এক বন্ধু একটা ছড়ি শয়ের সামনে ঘুরাচ্ছিল! ছড়িটা মাঝে মাঝে শয়ের নাকের ডগায় লেগে যাচ্ছিল! নাকের ডগায় লাগা দেখে শয়ের বন্ধু মুচকি হেসে বলে উঠল ছড়ি ঘুরানোটা আমার অধিকার আমার স্বাধীনতা! আমি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই ছড়ি ঘুরাতে পারি! তার এ কথা শুনে শ মুচকি হেসে বললেন, তোমার ছড়ি ঘুরানোর অধিকার, তোমার ছড়ি ঘুরানোর স্বাধীনতা আমার নাকের ডগার সীমানার আগ পর্যন্ত! আমার নাকের ডগায় তোমার ছড়ির স্পর্শ আমার নিজের অধিকারে আঘাত! এখানে তোমার কোন স্বাধীনতা নেই!শুধু আমার স্বাধীনতা!
শয়ের এই কথাটা স্বাধীনতার সীমা নির্ণায়ক হিসেবে অভিহিত হতে পারে!সুতরাং যাচ্ছেতাই কথা কাজ করে আমরা বাক স্বাধীনতার আশ্রয় নিতে পারি না! বহু মানুষের অনুভূতিকে আঘাত করে কিছু বলা বা লেখাকে শাণিত করে নিজের বাক স্বাধীনতার বিজ্ঞাপন দিতে পারি না!আমার সব স্বাধীনতা ভোগ করার সময় অন্যের অধিকার ভুলে যেতে পারি না! তাহলে এটা হবে উলঙ্গ স্বাধীনতা! অভিজাত মানুষ যেমন নিজেকে উপস্থাপনের সময় পোষাক পরে তেমনি স্বাধীনতা সার্থকভাবে ফুটে ওঠে এর চৌহদ্দির পোষাকে আবৃত হওয়ার মাধ্যমে! এটা সর্বজনবিদিত কথা যে অভিজাত মানুষেরাই অন্যের অধিকারকে সম্মান করে, তাই অভিজাতদের হাতেই স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ আভিজাত্য বিকশিত হয়!এখানে অভিজাতদের পোষাক নির্ধারণ করা হয়নি বরং যে অন্যকে সম্মান জানাতে পারে,অন্যের অধিকারকে সম্মান জানাতে পারে সেই প্রকৃত অভিজাত ব্যক্তি!তার হাতেই স্বাধীনতা সমহিমায় উদ্ভাসিত হয়! বিজয়ের মাসের শ্লোগান হোক আভিজাত্যের,,,বিজয় দিবসের শ্লোগান হোক নিজেকে অভিজাত করে গড়ে তোলার।
লেখক: কবি ও কলামিস্ট, ইবি, কুষ্টিয়া।
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন