ঢাকায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা
তরিকুল ইসলাম : রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা এসেছে মিয়ানমারের ছয় সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ট থো প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের মূল বৈঠকেটি আজ সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন। ঐ বৈঠক থেকে মূলত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। যেখানে যৌথ ওয়াকিং গ্রুপ গঠনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকতা বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এবার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণের জন্যই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। এ বৈঠক থেকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওয়াকিং গ্রুপে উভয় দেশ থেকে ১২ জন করে মোট ২৪ জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা যুক্ত থাকবেন। বাংলাদেশ দলে স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ অন্তত ৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্র্তারা থাকছেন। দ্বিপক্ষীয় ওই আলোচনার প্রস্তুতি বিষয়ে রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সেই সভায় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেখানে প্রস্তাবিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কাঠামো এবং কর্মক্ষমতা বিষয়ক টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে উঠে আসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অস্পষ্টতা বা ধোঁয়াশায় থাকা বিষয়গুলো। সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মিয়ানমারের তরফে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব ওয়ার্কিং গ্রুপের নেতৃত্বে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের আওতায় ফাংশনাল লেভেলে একটি সাব-কমিটি গঠনের চিন্তা রয়েছে। যুগ্ম সচিব বা মহাপরিচালকের নেতৃত্বে উভয় দেশের ৫ থেকে ৬ জন করে ১০ বা ১২ সদস্যের সেই কমিটি হতে পারে। ওই কমিটি জরুরি প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বৈঠক করে যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে এখন নবাগত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ৫৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছে আরো ৪ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের নেপিডোতে গত ২৩ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় অ্যারেঞ্জমেন্টের শর্ত মতে, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং এর কার্যপদ্ধতি তিন সপ্তাহের মধ্যে নির্ধারিত হবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রক্রিয়াটি ১৪ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সময়সীমা পেরিয়ে সেটি এখন সমূহ সম্ভাবনায় গড়িয়েছে। বাংলাদেশ ২ নভেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যদের তালিকা হস্তান্তর করে এবং মিয়ানমার ১ ডিসেম্বর তালিকা হস্তান্তর করে। কমিটির কার্যপদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশ ১৪ নভেম্বর প্রস্তাব করে এবং এর বিপরীতে মিয়ানমার ৪ ডিসেম্বর তাদের পাল্টা প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১০ ডিসেম্বর এর ফিরতি প্রস্তাব করা হয়। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, ডিজিএফআই, এনএসআই, বিজিবি, কক্সবাজার প্রশাসক, মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিরা সদস্য হিসাবে থাকবে বলে জানাগেছে। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন