লিয়ন মীর : ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের মতো নেই, আগে ঢাকা শহরের যেখানে-সেখানে, যখন-তখন ছিনতাই হতো। এখন রাজধনীর নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে ছিনতাই হয়ে থাকে। ছিনতাইকারীরা ব্যস্ততম স্থান এবং ছিনতাইয়ের পরে যেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া যায় সাধারণত সেই াঁয়গাগুলোকে ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নেয়। সে তুলনায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ছিনতাই কমেছে। তবে ছিনতাইয়ের ধরন পরিবর্তনের সাথে সাথে নিষ্ঠুরতার গ-ি পেরিয়ে বীভৎসতায় পরিণত হয়েছে। অপরাধ বিজ্ঞানী ড. জিয়া রহমান দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সাথে আলাপকালে এই সব কথা বলে। ড. জিয়া রহমান বলেন, যেখানে মায়ের কোলে থাকা তিন-চার মাসের শিশু সন্তানও রক্ষা পাচ্ছে না ছিনতাইকারিদের নিষ্ঠুরতা থেকে, যখন সামান্য অর্থের জন্য মানুষ ছোট শিশুকে ছুরিকাঘাত করে তখন তা নিষ্ঠুরতার ছক ছাড়িয়ে বীভৎসতায় রূপ নেয়।
তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের পেছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। লক্ষ করলে দেখা যায়, আমাদের সমাজে সামাজিক একটা অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের হাতে নগদ টাকা যেমন এসেছে, সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার তার সাথে পণ্য দ্রব্যের দামও বেড়েছে। মানুষে মানুষে প্রতিযোগিতার সাথে সাথে অসমতা বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সমাজের মাঝে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নেশাগ্রস্ত তরুণরা যখন কোনোভাবেই তাদের নেশার টাকা জোগাড় করতে পারে না, ঠিক তখন তারা আর কোনো উপায় না পেয়ে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মাঝে বেশ বড় বড় পরিবারের সন্তানরাও আছে। নেশাগ্রস্ত একজন ব্যক্তি যখন ছিনতাই করতে যায় তখন তার কোনো স্বাভাবিক চিন্তা শক্তি থাকে না। সে কারণে ছিনতাই করতে গিয়ে ওই নেশাগ্রস্থ’ ব্যক্তিটি বীভৎস ঘটনার জন্ম দেয়। সে হয়তো নিজেই জানে না যে তার দ্বারা কেমন একটা বেদনাহত ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, এমন ধরনের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সামাজিক অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে পারিবারিক বন্ধন খুব ঢিলে হয়ে আছে। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হলে পিতা-মাতাকে সন্তানদের আরও বেশি করে সময় দিতে হবে। তাদের খবরাখবর জানতে হবে। মনোজগতের ভবনায় বিচরণ করতে হবে। কেননা পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলাবোধই সমাজের অস্থিরতা দূর করতে পারে।